আন্তর্জাতিক নারী দিবস কী ও কেন


প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহিলাদের কৃতিত্বকে চিহ্নিত করতে মার্চ মাসের ৮ তারিখটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কিংবা পেশাদার জীবনে মহিলাদের নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। এই দিন পালনের মধ্য দিয়ে এই বিষয়টিকেও সকলের সামনে তুলে ধরে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা চালানো হয়ে থাকে। 

করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১-এর থিম: 

প্রতি বছরই পৃথক পৃথক থিমে পালিত হয় এই দিনটি। প্রথমবার ১৯৯৬ সালে নির্দিষ্ট থিমে পালিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। চলতি বছরের থিম হচ্ছে Women in leadership: an equal future in a COVID-19 world (নেতৃত্বে নারী: কোভিড ১৯ পৃথিবীতে সমান ভবিষ্যৎ লাভ)। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, বিশেষত নীতি নির্ধারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মহিলারাও সমান অংশীদার হতে পারেন, তাই এই থিমের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী, সমান ভবিষ্যৎ এবং অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য মহিলাদের চেষ্টাকে সকলের সামনে তুলে ধরাও এই থিমের অন্যতম উদ্দেশ্য। 

রাষ্ট্রসংঘের মতে, পৃথিবীতে শুধুমাত্র তিনটি দেশের সংসদে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মহিলা রয়েছেন। শুধুমাত্র ২২টি রাষ্ট্রের প্রধান পদে আসীন আছেন মহিলারা। এমনকী পৃথিবীর ১১৯ টি দেশে কখনও মহিলারা রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালনের সুযোগ পাননি। রাষ্ট্রসংঘও জানিয়েছে যে, বর্তমান উন্নয়নের হার এবং লিঙ্গসাম্যের বিষয়টি বিবেচনা করে বোঝা যাচ্ছে যে, ২০৬৩ সালের আগে সংসদে নিজের স্থান পাকা করতে পারবেন না মহিলারা।

কোভিড ১৯ অতিমারি এবং মহিলাদের ভূমিকা:

এই অতিমারি দেখিয়েছে মহিলাদের নেতৃত্ব প্রদানের ইতিবাচক ফলাফল। করোনা ভাইরাস অতিমারির সময় কয়েকটি সফল ও দক্ষ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব প্রদান করেছেন মহিলারা। অতিমারীর সঙ্গে মানব সভ্যতার যুদ্ধে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত হোক বা বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সেবিকা— সব ক্ষেত্রেই তাঁদের উপস্থিতি পরিস্থিতিকে উন্নত করেছে। তবে রাষ্ট্রসংঘের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী নিজের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ১১ শতাংশ হারে কম বেতন পাচ্ছেন প্রথমসারির করোনা মহিলা যোদ্ধারা। যা বেতন কাঠামোর বৈষম্যকেই প্রকাশ করে।

২০২১ সালের ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে জানা গিয়েছে, ৪৩.৫ কোটি মহিলা ও মেয়েরা দিনে প্রায় ১৩৫ টাকার চেয়েও কম উপার্জন করছেন। আবার করোনা অতিমারির সময়কাল ৪.৭ কোটি মহিলাদের দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হচ্ছে যে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চাকরি ১৯ শতাংশ বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে।

শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম অনুযায়ী, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ মহিলারা কাজ করলেও শুধুমাত্র ২৪.৭ শতাংশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীই একজন নারী।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য: 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মধ্য দিয়ে নারীত্বের উৎসব পালিত হয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে মহিলাদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এই দিনে প্রত্যেককে নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। পাশাপাশি মহিলাদের সমান অধিকারের লড়াই জোরদার করা এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ