জাহেদ বিন আলী সুজনের কবিতা

 

বিবেক


এই যে স্যার,
একটু দাড়াবেন, কিছু কথা ছিল আপনার সাথে।
আপনি তো জাতির মেরুদন্ড গড়ার কারিগর, তাই না?
একটা জাতি নির্ভাবনায় নির্ভর করে আপনার উপর,
জাতির ভবিষ্যত শ্রষ্টা আপনি, এমন হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছেন কোথায়?
ও আচ্ছা কোচিং সেন্টারে,,,,
স্যার, স্কুলে একটা ছাত্রকে যতটা সময় দেয়া হয়,
এসব কোচিং সেন্টারে তো তার অর্ধেকও দেয়া হয় না,,
এবং স্কুলে তো আপনিই পড়ান কোচিংয়েও আপনি পড়াবেন,,
তবে এই দুটোর মাঝে পার্থক্য কোথায়, একটু বলবেন কি?
ছোট ছোট বাচ্চাদের অযথা টেনশন কেন দিচ্ছেন?
আপনি কি জানেন, কোচিংয়ের খরচ যোগাতে বাবাদের কতটা কষ্ট করতে হয়?
কোচিংয়ের মত করে স্কুলে কেন পড়ানো হয় না?
ইচ্ছে করলেই আপনারা পারেন, তবে আপনাদের সেই ইচ্ছেটা কেন হয় না?
স্যার যাচ্ছেন কোথায়,আরো কিছু কথা ছিল তো....
এই যে পুলিশ ভাই 
একটু সময় দেয়া যাবে? কিছু কথা ছিল আপনার সাথে,
চিনতে পেরেছেন আমায়?
জেলে আমরা এক সাথে ছিলাম,একই রুমে,
জেলের প্রতিটা মানুষ আপনাকে ঘৃনা করতো নিশ্চই বুঝতে পেরেছিলেন,
সবার ধারনা ছিল আপনার ফাঁসি হবে,,
গর্ভবতী স্ত্রীর পেটে লাথি মেরে দুটো মানুষকে খুন করেও 
আপনি ঠিকই চাকরিতে ফিরে গেছেন ক্ষমতার জোরে,
এক মাসও জেল খাটতে হয়নি আপনার,
নিজে অপরাধী হয়ে আরেক অপরাধীকে যখন জেলে ঢুকান তখন কি একটু লজ্জা হয় না আপনার?
কাকের মাংস কাকে খায় না, কথাটা ভুল প্রমানিত করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাদের মাঝেই তো অনেকে আছেন যাদেরকে সাধারন মানুষ শ্রদ্ধা করে,
প্রান দিয়ে ভালবাসে,
সেই শ্রদ্ধা,ভালবাসা পেতে ইচ্ছে করে না?
যদি মানুষ হতেন তবে ঠিকই সেই ভালবাসার মর্যাদাটা বুঝতেন।
আপনি তো একজন ডাক্তার,
সাধারন মানুষের কাছে আপনি কতটা শ্রদ্ধার, সেটা কি আপনি জানেন?
সাধারন মানুষের কাছে আপনার স্থানটা কত উঁচুতে তা মনে হয় আপনি জানেন না।
যদি জানতেন তাহলে আপনার ক্লিনিকের সামনে রাস্তার উপর কোন মাকে সন্তান প্রসব করতে হত না,
কমিশনের জন্য এক গাদা টেষ্ট দিতেন না,
সরকারী হাসপাতালে পরিক্ষা করার মেশিন গুলো বিকল হয়ে পড়ে থাকতো না,
কোন প্রেসক্রিপশনে মানহীন ওষুধের নাম উঠতো না,
ডাক্তার হতে আপনার অনেক মেধা,ও টাকা খরচ হয়েছে,
অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে,
মানুষের সেবা করাটাকে দয়া করে ব্যবসায়ী খাতায় উঠাবেন না,
মানুষ তো অনেক আছে সবাই কিন্তু ডাক্তার হবার মেধা নিয়ে জন্মায়নি,
বিধাতা আপনাকে মানুষের সেবা করার জন্য আলাদা একটা মর্যাদা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন,
এমনটা কি ভাবা যায় না?
সময় পেলে একটু ভেবে দেখবেন।
আমার পরিচয়?
চিনতে পারেননি আমায়?
এক সময় আপনার অংশ হয়েই তো ছিলাম,
আপনি আমায় ভুলে গেলেও আমি কিন্তু আপনাকে ভুলিনি,
আমি আপনার সেই "বিবেক" যাকে আপনি নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছিলেন।
আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেন, আমার হাত থেকে পালাবার কোন পথই নেই,
আপনিও তৈরী থাকবেন,
আপনার সাথেও দেখা হতে পারে যেকোন সময়।

 একটি পতাকা পেলে


কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমরা গড়ব আমাদের সোনার বাংলা।
পতাকা আমরা ঠিকই পেয়েছি, লড়ে পেয়েছি
কিন্তু আজো বেদনাগাঁথা গেয়ে চলেছি,
দিস্তায় দিস্তায় কষ্টের কবিতা লিখছি,
প্রাপ্তির খুশীতে বলতে পারিনি একটিবারো, 'পেয়েছি, পেয়েছি',
আমরা আসলেই কতো অভাগা। 

কথা তো অনেক ছিলো।
কিন্তু আজো সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
চল্লিশে বসে ব্যর্থতা, জীবনের শূন্যতাই উপলব্ধি করেন।
আজো পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে 
ওম নেয় পাতা পুড়িয়ে, বুড়ি নানীর খিস্তি শুনে;
জাতীয় সংগীত হয়তো সে শোনেইনি কখনো,
হয়তো শুনেছে, কিন্তু কিই বা মূল্য আছে  -
সেই সংগীতের তার কাছে?

ভূমিহীন সেই মনুমিয়াও পতাকা পেয়েছিল,
ঠিক যেমনটি কথা ছিল।
সেই পতাকা আজো ওড়ে পতপত করে
অথচ মনুমিয়ার কণ্ঠে আজ কোনো গান নেই,
না জ্যৈষ্ঠে- না বৈশাখে,
তবে অতৃপ্তির বেদনার নীরব কান্না আছে বছর জুরে।

কথা তো অনেক ছিলো।
সেই যুদ্ধের শিশু আজ  চল্লিশোর্ধ, 
অসন্মানের ক্লান্তিতে সে পরিশ্রান্ত।
কথা তো ছিলো সুখেরও সমান  ভাগ হওয়ার,
আমাদের সব দুঃখ যৌথ-খামারে জমা দেবার।
কথা তো অনেক ছিলো।

কিন্তু কোথায় যেন ভুল হয়েছে, ভুল হচ্ছে।
নিজের পতাকা পেয়েও ওটাকে এখনো
ঠিক মতো ওড়ানো হয়ে ওঠেনি
পরাধীনতার গ্লানি এখনো ঘুচানো যায়নি।

গণতন্ত্র-মেয়াদে উত্তীর্ন মোড়কে নতুন


গণতন্ত্র!সে আবার কি জিনিস?
জানোনা?প্রতিটা দিন যাপনে হিমশিম খাওয়া
আর পাঁচ বছর ঘুরে নির্দলীয় ভেঁপু বাক্সে কাগজ ফেলাই গনতন্ত্র।
দিন নেই,রাত নেই মাইকিং অনবরত
গনতন্ত্র নামে একটা নতুন শব্দ এসেছে যেন অভিধানে।
তুমি শোননি,
ভাদ্র মাস না এলেও রাস্তায় গনতন্ত গনতন্ত্র
বলে আজন্ম চিৎকার 
আর দেশপ্রেমে বলাৎকার করে রাজপথে আগুন জ্বালে একদল কুকুর!
আর সেই আগুনে গা সেঁকে পুরো মাঘ মাস কাটিয়ে দেয়
একদল মানুষের বাচ্চারা....
আর সাধারন আগুনে পুড়ে চিৎকার করে হাসপাতালে।
তবুও কত সংগ্রামে অর্জিত গনতন্ত্র
হ্যা ইংরেজদের ঝাঁটা মেরে বিদায় করার পরে
গনতন্তের সাথে আমাদের অবৈধ সহবাস
আমাদের তৃষ্ণার্ত মুখে কিঞ্চিত কামরস বর্ষন করে
দিনান্তে এই গনতন্ত্রের মজা লোটে সুবিধাবাধি শাসকমহল
পঁচে যাওয়া এই শাসন ব্যাবস্থাই কি তবে গনতন্ত্র?
ছি! এর গন্ধ কেমন তুমি শুঁকেছো?
পুলিশ যেখানে যে কোন সময় গরীব অসহায়দের
গ্রেফতার করে জেলে পুরতে পারে?
স্বাধীনতা যেখানে কালোবাজারে বিক্রি হয় সুদের প্রিমিয়ামে,
মন্ত্রী আমলাদের আয়,ব্যাংক ব্যালেন্স আর দুর্নীতি -
যেখানে একই রেটে বাড়ে?
এটাই কি গনতন্ত্র?
শাসকের পরিবর্তন হয়
কিন্তু হয়না শোষনের অবসান।
প্রতি পাঁচ বছর পর নতুন করে পুরোনো
শান্তির যমদূতেরা হাজির হয়,
আবার ভেঁপু বাক্সে কাগজ পরে।
ধর্ম আর মানবতার নামে এইসব যমদূতদের
আমরা গনতন্ত্রের লেবাসে আশ্রয় প্রশ্রয় দেই।
দিনান্তে সেই যমদূতেরা আবার বিজয়ীর হাসি হাসে,
আমরা আবার ফিরে যাই দিনযাপনে হিমশিম খাওয়া 
দমবন্ধ এক একটা দিনে,
আবার দেখি আমাদের সেই গনতন্ত্রকে,
যার মেয়াদ উত্তীর্ন কিন্ত মোড়কে নতুন!
আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ