রাণী চৌধুরীর কবিতা

শিরোনামহীন



আজ চারিদিকে  চোখে দেখি শূন্যতা। 
কোথাও কেউ নেই আমার।
আমি একা এই শূন্যতার মতই একা।
যে চোখে স্বপ্ন দেখে পা বাড়িয়ে ছিলাম অনাগত ভবিষ্যতের দিকে।
আজ সে চোখে স্বপ্ন নেই।
স্বপ্নেরা ভুলে গেছে কবে নিঃস্বাস নিতে।
বুকের পাঁজরে জীবাশ্মের  ইতিহাস হয়ে আছে আমার কিছু স্বপ্ন। 
বিষাদের স্রোতে আমি কোথায় পথ হারিয়েছি জানিনা।
এখনও পায়ের নিচে মাটিই আছে তবে সে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি নেই
আজ আমি মেরুদণ্ড হীন এক প্রাণ।
বেচে আছি তবে কাজে আসি না আর।
অবলম্বনে জড়িয়ে উপরে উঠবো তেমন কোনো খুটি পাই নি।
আমি বন্দী নই তবে জন জীবনহীন জায়গায় আজ নির্বাসিত।
একদিন হৃদয়ে বিশাল নীল আকাশ এঁকেছিলাম। 
যেখানে খুশির ফানুস উড়িয়ে রচনা করেছিলাম কাব্যের মাঠ।
অজস্র নক্ষত্রের বাহার হয়তো ছিলোনা সেখানে তবে ছিল একটি আদুরে চাঁদ। 

গুটিকয়েক জোছনায় ভরে উটতো সে আমার ছোট্টো  হৃদয়ে। 
দিগন্তের খয়েরী বিকেলে অনায়াসে জমা হতো আমার 
দুঃখের কিছু  গল্প। 
মাঝে মাঝে সেই গল্পেরা মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াতো
কখনও বৃষ্টি হয়ে নেমে আসতো।  
আজ সে আকাশও আমার কষ্টের ভাগ নেয় না। 

নীল আকাশ আজ রঙহীন। 
তবুও বুকপকেটে জমা হৃদয় নিঃস্বাস খুঁজে ফেরে। 
বড্ড অক্সিজেনের অভাব বোধ করি আজ কাল।
আর বোধ করি কিছু ভালোবাসার। 
আদিম পৃথিবী একই ভাবে সচল হয়ে আছে
ঐ আকাশ বায়ু জল মাটি।
শুধু আমিই আমি হয়ে উঠতে পারিনি।

মরুভূমি


প্রচন্ড রৌদ্র, তপ্ত দুপুর আমার মরুভূমির বুকে।
বৃষ্টি তোমার স্পর্শের হিমেল সুখ প্রয়োজন।
প্রতিদিন সূর্য স্নানে দগ্ধ হয় যৌবন। 
সূর্যের তাপে উত্তপ্ত লু বায়ু হার না মানার মতো ছুটে চলে বুকের উপর দিয়ে।
তবুও বৃষ্টি তুমি এলে না বুকে।

মাঝে মাঝে মেঘের হাতছানি আকাশের বুকে ভেসে চলে।
সে কি তবে মরিচিকা? 
বলো আর কতটা প্রতিক্ষা করলে তোমাকে পাওয়া যাবে?
বুকের মেঝেতে শষ্য চাষ হয়নি কখনো। 
শুধু ক্যাকটাস সবুজ পাতার পোশাক খুলে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার বুকে।
বুকের কতটা গভীরে ক্ষত করে দাঁড়িয়ে আছে,
বৃষ্টি তুমি কি চোখ মেলে চাও নি কখনো? 
তোমার শীতল তাজা ঘ্রাণের অপেক্ষায় হাহাকার পড়েছে বুকে।
বলো কোন নারীর বুকে সবুজ ফলাও তুমি?
কোন সমভুমির বুকে ঘুমিয়ে আছো আজও? 
আমার বুকের জমিতে যে তীব্র ব্যথা,
তুমি হয়তো বুঝেও না বোঝার ভান করো।
বৈষম্যের কারাগারে আজও আমি বন্দি।
তোমার এক আকাশ মেঘ, সবাইকে প্রাণের ছোয়া লাগিয়েছো।
তবে আমার বেলায় কেন তোমার রাষ্ট্রের কোষাগার শূন্য? 
বলো কোন অপরাধে আমাকে করেছো দোষী?
আমি তো তোমায় ছলনায় রাখিনি কখনও। 
তবে কেন?
ফসলে ভরা গর্ভবতী মাঠ আমার হয়ে ওঠেনি।
বার বার প্রকৃতির সর্বনাশী হাতছানি আমাকে মরিচিকার পেছনে ছোটায়।
বলো আর কতোটা ছুটলে তোমাকে ছুতে পারবো।
আর কতটা পুড়লে তোমার শীতল ছোঁয়া পাবো।

আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ