ছোটগল্প: সুখের আশায় | নুসরাত জাহান


বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী শেষ করে বের হতেই অপেক্ষারত ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা মেলে প্রবাসী শফিক মিয়ার। মিষ্টি হাসির মধ্যদিয়ে দু-ভাইয়ের কুশলাদি বিনিময়। দেশের মাটিতে পা রাখতে পেরে রফিক বেজায় খুশি। যদিও ছুটিটা মাত্র ২মাসের। দুই ভাই মিলে ঢাকায় চাচাতো ভাইয়ের বাসায় ওঠে, ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। আর সন্ধ্যার পরেই কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে করে সোজা বাড়ীর পথে। কতদিন পর প্রিয় গ্রামে ফিরছে সে! গ্রামের মুক্ত বাতাসে বুকভরে শ্বাস নিবে, পাখিদের কিচিরমিচির ডাক, শৈশব-কৈশোরের কত মধুর স্মৃতি মনে পরে! আনন্দ যেন আর ধরেনা শফিক মিয়ার মনে।

খুব অল্পবয়সে পারিবারিক ভাবে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয় শরীফা বেগমের। পরপর দুই সন্তানের জন্মদেন তিনি। ২য় সন্তানটি জন্মদানের সময় তো মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছিল তার। ছোট ছেলেটির জন্ম হওয়ার কিছুদিন পরেই একদিন হঠৎ করে স্ট্রোক করে পরলোক গমন করেন তার স্বামী। শুরুহয় দুই সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার তীব্র লড়াই। খুব অল্পপরিমাণ জমি থাকলেও সংসারে অভাব লেগেই থাকত। দেড়বছর আগে সংসারে স্বচ্ছলতার প্রত্যাশায় বড় ছেলেটিকে কোনরকমে এসএসসি পাশ করানোর পর দুঃখ-কষ্ট লাঘবের আশায় সামান্য জমি বন্ধক দিয়ে, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কাছে চড়াসুদে টাকা ধার নিয়ে বিদেশে পাঠান। আশায় বুক বাঁধেন শরীফা বেগম। সেই ছেলে আজ মাস দুইয়ের ছুটিতে বাড়ি আসছে। পুকুরে মাছ জিইয়ে রেখেছেন, বড় মোরগটা বেঁধে রেখেছেন, আতপচাল গুড়ো করে রেখেছেন। এখন শুধু ভালোয় ভালোয় ছেলে ঘরে ফিরলেই হয়।

ভালোই চলছিল তাদের দিন। হঠাৎ করে মহামারী করোনার কারনে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে রফিক মিয়ার ছুটিও শেষের দিকে। এমত সময়ে তার ফিরে যাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। দীর্ঘদিন পরে ফ্লাইট চালু হলেও সেদেশের সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারনে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়না রফিক মিয়ার।দেশেও কাটাতে হয় কর্মহীন জীবন। কারন এমন মহামারী পরিস্থিতিতে কোথাও কাজ পাওয়া অত সহজ কথা নয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পাওনাদারদেরও চাপ বাড়তে থাকে। দিশেহারা হয়ে যায় শরীফা বেগমের পরিবার। চাপের মুখে বাধ্য হয়ে সামান্য জমিটুকুও বিক্রি করে দেয়। কিন্তু সুদ বাড়তে বাড়তে ঋণের বোঝা যেখানে আকাশছোয়া সেখানে জমি বিক্রির এই সামান্য টাকা যেন মরুভূমির বুকে একফোঁটা জল। 

যে স্বচ্ছলতা এবং সুখের আশায় বুক বেধেছিলেন শরীফা বেগম, মহামারী করোনা এসে সেই স্বচ্ছলতার বদলে আজ পথে বসিয়ে দিয়েছেন তাদের।
আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ