কলেজে যে ছেলে প্রেম করে না তারা যেন অসহায়৷ তারা চায় সহজ সরল ভাবে জীবন যাপন করতে স্কুলের সোনালি দিন গুলোর মত করে কাটিয়ে দিতে ৷ আজিজও তেমন ৷ কিন্ত ওর সুপ্ত ইচ্ছা প্রকাশ করার মতো কোন উপায় নাই সব সময় বন্ধুরা বড় ভাইয়েরা লেগে থাকে বিরক্ত করার জন্য৷ আর যারা প্রেম করে ব্যর্থ তাদের বড় একটা তালিকা ও করেছে শাহাজাহান৷ শাহাজাহান ভাইয়া কোনো প্রতিবন্ধী নয়৷ প্রেমের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে৷ কলেজ থেকে মাস্টর্স পাশ করেছে৷ প্রতিদিন কারো না কারো কাছে ইংরেজিতে কথা বলে খাতার পাতা চেয়ে নেবে ৷ আর শুরুতেই লিখবে
Dear নুশিন
আমার একটাই Question
কেন গেলে চলে
আমি কি অন্যের মতো খারাপ ছেলে?
জানো মৌ আপু শাহাজাহান ভাইয়ের জন্য আমার খারাপ লাগে৷ সে দিন জামতলায় সৌমিনী আমাকে বলেছিলো যে তীর্থ দা একবার ও জিজ্ঞেস করলে না কেন? আমার বিয়ের ব্যাপারে ৷ হ্যাঁ আমি জানতে চাইনি ৷ সে হয়তো আমার কাছ থেকে আশা করেছিলো একবারের মতো জিজ্ঞেস করি কেমন আছে তার বর, কি কাজ করে ইত্যাদি৷ সেদিন আজিজ আসে নি তার বাবা হাসপাতালে৷ জন্ডিস হয়েসে ৷ মঙ্গলবারের দিন দেখতে গেলাম৷ ঐ দিন একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে৷
আজিজকে বললাম চিন্তার কারণ নেই ঠিক ঠাক মতো ঔষধ পথ্যি খাওয়াস ৷ প্রচুর পরিশ্রম করে তো তাই একটু আঙ্কেলের বিশ্রাম দরকার৷ হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আমার ছোটবেলার বান্ধবী সুরমা খাতুনের সাথে দেখা৷ চমৎকার রবীন্দ্রগীতি পরিবেশন করতে জানেন আমর অবশ্য মন্দ লাগে না ৷ কেমন যেন শীতল ছায়া অনুভব করি গান গুলোতে ৷
সুরমা আমাকে নিয়ে সব সময় খেলতো হাড়িপাতিল, বর বউ,পুতুলের বিয়ে৷ একদিন তো সে বউ সেজেছে আর আমাকে বর সাজাবে আমি কিছুতে রাজি না৷ সুরমা আমার ছয়মাসের বড়৷ সুরমা তার মাকে বলতো যে সে আমাকে বিয়ে করবে কানাই কাকার বিয়ের মতো আমাদের বিয়েতে ঢোল সানাই বাজবে ৷ বড় আম্মা আমাকে এখনো জামাই বাবা বলে ৷ সুরমাকে বলতো বড় হলে তোমাদের একসাথে বিয়ে দিবো৷ আমি দৌড়ে পালাতাম৷ এখন সুরমা হাজী দানেশ ভার্সিটিতে পড়ে ৷ গতবার বিজয় দিবসে সুরমার গান শুনতে গেছিলাম ৷বড় আম্মা আমাকে বলে
-আহা রে, জামাই বাবা শশুড় বাড়ী কেউ খালি হাতে আসে৷ সুরমা বলে উঠলেল
- মা তুমি সব সময় তীর্থের পেছনে লাগবে না তো ,ও এমনিতেই আসতে চায় না৷
- আয় ভেতরে আয়৷ কেমন আছিস?
- হু ভালো তুই
- আছি ভালো ৷ আমার ঘরে বস ৷ আমি আসতেছি৷
ঘরের চারদেয়ালে সুন্দর করে কিছু কবি সাহিত্যিক এর ফটো ঝুলতেছে ৷ টেবিলের এক কোণে একটা হারমোনিয়াম আর তবলা ফুলদানিতে কাপড়ের তৈরি একটা গোলাপ৷ আর একটা টেবিলে পড়াশুনার বই৷ সুন্দর একটা টেবিল ঘড়ি আর পেপার ওয়েট৷ আমি পেপার ওয়েটা হাতে নিয়ে দলাদলি করতে শুরু করলাম ৷ তারপর সুরমা আপু বলতে খোলাচুলে চিরুনী দিতে দিতে ঘরের ভেতরে আসলো ৷
- কিরে বল তোর কি অবস্থা ৷ প্রেম টেম হলো ৷
- কিযে কও৷
- পকেটে কি এনেছিস? বের কর দেখি?
- তেঁতুল চাটনি ৷
বের করার সাথে ছোঁ মেরে নিয়ে ডয়ারে রেখে দিলো ৷ কাকিমা কেমন আছে?
-হু ভালো ৷ তোর জন্য আমের আচার বানিয়ে আলমারীতে তালা দিয়ে রেখেছে৷ একেদিন তো কাগজ খুঁজতে গিয়ে একটু কৌটোটা খুলতে যাবো অমনি ধরা খেলাম ৷ বলল যে ছেলে মানুসের আচার খেতে নেই৷ বললাম কে খাবে এসব ঘরে তো মেয়ে নেই৷ বলল সুরমা দিনাজপুর থেকে আসলে সে খাবে ৷
-তাই কাাকিমা নারিকেলের নাড়ু বানানো পদ্ধতিটা অসাধারণ৷ এবার বড় আম্মা পানির পাত্র হাতে নিয়ে দরজার পর্দাটা সরিয়ে দিলেন ৷
- বাবা হাত ধুয়ে নাও৷ পিঠা বানিয়েছি খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে?
বলে পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে টুপ করে বসলেন৷ হাতের চিরুনিটা নিয়ে সুরমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন৷
আমি হাতটা ধুয়ে নিয়ে পিঠা মুখে দিলাম৷ বললাম আম্মা জবাব নেই৷ বরাবরে আপনার হাতের তৈরি পিঠা দারুন হয়৷ বড় আম্মা জানালার পর্দাটা এবার সরিয়ে দিলেন ৷ বাইরের অলোকনন্দা ফুলের গাছটি দাঁড়িয়ে আছে৷ ছোট বেলায় এই ফুলে কলাগাছের সোঁতর(কান্ডের এক অংশ বিশেষ) দিয়ে বেঁধে মাইক বানাতাম৷ সুরমার মা আমাকে খুবেই আদর করে৷
ও
মৌ আপু আমার এতো বড় চিঠি পড়ে হয়তো বিরক্ত হয়ে যাচ্ছো৷ আজ আর না লিখি আমাকে বাজারে কিছু খরচ করতে হবে৷ আর আমার এই পত্রের সাড়া পাওয়া অপেক্ষায় রইলাম৷
তোমার স্নেহাসিক্ত
তীর্থ৷
আজিজের বাবা সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ কলেজ খোলার কোনো অবকাশ নেই ৷ রাজশাহীতে করোনা ভা্ইরাস বেড়েই চলেছে ৷ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছেন৷ সরকারি বিধি নিষেধ মানতে নিউজ চ্যানেল তাদের মত করে প্রচার করছে৷ সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষনা দিয়েছে ।
আরো পড়ুন -->>
0 মন্তব্যসমূহ
অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।