দেবাশিস সাহার কবিতা

না-বলা কথা


জিভ ছিঁড়ে নেবার পর
পিছু পিছু কিছুটা পথ
তেড়ে গিয়েছিল 
ফোঁটা ফোঁটা রক্তবিন্দু

শালিখের ঠোঁটে ঠোঁটে 
আমার কথা
ফিরে এসেছে মানুষ সমাজে

আমার না-বলা কথা
শীতকাল হয়ে জমে থাকে
মেহনতী মানুষের রক্তে

কোনো  কোনো কথা
বারবার বলবার জন্যে
জন্ম নেয় পাখি 

সুরে তালে ছন্দে 
সবার মুখের কথা

শোষণের বিপরীতে 
মুখর হোক মানুষ।

ছায়াঘর


ঝন ঝন করে ঝরে গেলো সিঁদুর 
টুকরো টুকরো সিঁথিতে
খেলে বেড়াবে যৌনতা 

রাত ডিঙিয়ে পার হচ্ছে মেয়ে
শরীরে অমাবস্যা নেই
জোৎস্না দিয়ে রঙ করে বিছানা 

শরীর আজ অনলাইন 
ডিজিটাল দুনিয়ায় 
ভদকা মেশার জন্য খোঁজে সুন্দরী জল

জীবনের প্রতিটি পিরিয়ড বিজ্ঞাপন 
বিজ্ঞান আর অংক নিয়ে
বসে থাকে ছায়াঘর। 

কাঠকয়লা 


তুমি তো কাঠকয়লা 
শুধু অপেক্ষা করো

আগুনের জন্য 

রোদচশমা 


ঘরের কোনো ব্যাপারে 
নাক গলায় না রোদ
অভিমান হলে
জ্যোৎস্না ডেকে আনে

ভাঙা আয়নায় বাসা বাঁধে
শোক দুঃখ আর সংকট 
রোদ হাতে বের হই
কাজের খোঁজে 

জানালা খোলা পেয়ে
রাত ঘরে ঢোকে
রোদে ঝলসে যাওয়া মনে
লাগিয়ে দেয় ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান

ভালোবাসার ছাদবাগানে 
পাহারাদার প্রিয় রোদচশমা। 

চাকা+চাকা=দাম্পত্য 


দুটো চাকার যোগফল দাম্পত্য 
চাকা বসে গেলে
শুরু হয় দাম্পত্যকলহ

প্রতিটি দাম্পত্যের 
একটি ওপেন জানালা থাকে

জানালার এপাশে ঘর
চাকার ঘর্ষণে 
ঘর ভরে যায় অভিমানে

ওপাশে নদীর শয়নকক্ষ
নানা রঙের বাতাসের যাতায়াত 

কখনো-সখনো 
রাস্তা ভুল করে মুক্ত বাতাস
এসে পড়ে জানালার এপাশে
যেভাবে সুগন্ধি ভালোবাসা 
গড়িয়ে যায়

গতি বেড়ে যায় চাকার
দুটো চাকার এলোমেলো গতিপথে 
এসে পড়ে বালি

অনেকগুলো চাকার যোগফল 
মেনে নেওয়া
মানিয়ে নেওয়া 

চাকা বিয়োগ হলে
ঘরে ঝুল পড়ে
ঝুল সরাতে
এসে যায় ছোট বড়ো 
নানা সাইজের চাকা 


চিত্রহার


সুতোর ডগায়
উড়ে বেড়ায় যাবতীয় সাজসজ্জার স্বপ্ন

সম্বল বলতে
তোমার পাঠানো দুগাছি সাহস 

পথে নামলেই
সমস্ত রাস্তা নদী হয়ে যায়

হাসপাতাল কে
ঘিরে রেখেছে সাদা সাদা অসুস্থ মেঘ

কেশর কেটে দিলে
সিংহ রঙের বাবা নতুন হয়ে যায়

জেদ বেড়ে গেলে
থলে থেকে গড়িয়ে যায় মাসমাহিনা 

খেলা লেখা হলে
পরাজয় মাঝমাঠ থেকে ফিরে যায়

বিছানা জানে
দীর্ঘতম রাত কাকে বলে

কখনো কখনো 
খিদে দিয়ে খেয়ে ফেলি পান্তা

দুঃখ এডিট করলে
সুখে ম ম করবে ঘর।। 

উত্তরের মেঘ


পাঁচ-ই আশ্বিন পৃথিবী ভীষন ছোট হয়ে যাবে।
তুমি আমি মুখোমুখি
চেয়ে নেবো পুতুলের খেলাঘর। কেউ জানবে না।শুধু নদী এসে ধুয়ে দেবে যতো পাপ।মনে পড়বে সব বিকেল।
আর দাগ বরাবর তোমার হাসি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে সমুদ্র দেখাতে।তোমার খাঁজে খাঁজে খেলা করবে ঢেউ। আমরা মেতে উঠবো বিহু ছন্দে। 
উত্তরের মেঘ এসে খোঁজ করবে তোমার পিরিয়ড যাপনের। ফিরতি পথে নিয়ে আসবে তেজী একগুচ্ছ রডোডেনড্রন। মেঘের আঁচল থেকে কুড়িয়ে নেবো
নানা রঙের চুম্বন 
আর প্রকৃতি জুড়ে গাছেরা হাততালি দিতে দিতে চিৎকার করে বলবে... জন্মদিন জন্মদিন!!

ভৌগোলিক ভুল 


শোওয়ার ঘরে ঘটে যাওয়া 
ভৌগোলিক ভুল
টেনে বেড়াতে হয় বৃত্ত বরাবর 

পিয়াস জাগলেই
মনে হয় 
কোথাও জল খসছে

কেউ কেউ এই জীবনকে শরবত ভাবে
বোতাম খুলে রাখা রাস্তায় 
কার পায়ের ছাপ

হাসিটুকু মেখে থাকলে
গড়িয়ে গড়িয়ে আসে ভাত

সেলাই এঁকে চলে যায় প্রসব বেদনা। 

কালোমানুষ ভালোমানুষ


অন্ধকার রঙের কালোমানুষ
আকাশকে ব্ল্যাকবোর্ড ভেবে
লিখে রাখে নিকটজনের মৃত্যুকথা
মৃত্যুদিন তারা হয়ে ঝোলে ঈশানকোণে

তালির শব্দ আর বিদ্যুৎলতা কুড়িয়ে রাখে ডুবুরি 
পাতার মধ্যে কে সাজিয়ে রাখলো রান্নাঘর 
যে ডুবসাঁতার জানেনা 
তার কথাগুলো ব্যর্থ হয়ে ঢেউ 
পুতুলের ড্রয়িংরুমে 
শব্দ করে
হরেক রঙের ভালোমানুষ 

ঝগড়াবন্ধু


ব্যথাগুলো সেলাই করছে রাস্তা 
উড়ান জেনেও ফিরতে পারছে না পাখি
অপমান বড় হচ্ছে গোপনে 
আকাশপথ পারাপার করছে সেতু
গাছবউ  তুমি কি আমার ঝগড়াবন্ধু হবে 

নদীকে গন্ধবতী করবো  
বুনো ঘোড়াকে শেখাবো প্রেম 
ঝগড়া করতে করতে জেনে যাবো অভিমানের তাপমাত্রা
হাসিতে ওড়াবো রাত 
ভোর এসে ঠকঠক করবে দরজা

আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ