বৃষ্টি শেষে মেঘমালা শান্ত হয়ে যায়,কিংবা দেশান্তর,
পূর্ণ থেকে কমে গেলে ভাঙ্গন শুরু হয়।
ক্ষুধার জ্বালায় যঠোরাগ্নি জ্বলে।চৌচালা ফুটো দিয়ে চুয়ে পড়ছে।ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল। সুপারি গাছের ভিজে পাতা নিংড়ে ক'ফোটা।
পৈতৃক সম্পত্তির যা দুই একটুকরো ছিলো। তিস্তার তলদেশে গেছে বছর পাঁচেক আগে। গোপালের সম্পত্তি বলতে বাস্তুভিটা দুইশতক খানেক আর একটা গাভী ও এড়ে বাছুর। বাছুরটা পাড়ার সুরুজ দালালের কাছে ভালো দামে বিকিয়ে দিয়েছে। শ্রাবণ মাস টিনের চৌচালা ঘরে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। গোপালের বউ সারাদিন বাবুদের বাড়িতে ফাই ফরমাইশ খাটে। ঘরের চাল খারাপ সে নিয়ে গোপালের কোনো মাথা ব্যাথা নেই ।পাড়ার দোকানে পান, বিড়ি, চা খেয়ে অনেক টাকা পাওনা খাতায় পড়েছে। গরু বিকিয়ে পরিশোধ করেছে ।আর কি কি করছে তার কোনো হিসেব কিতাব নেই। ঘরে একটা ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে নিরলস প্রচেষ্টায়।
একদিন সকাল বেলা রামচরনের ভেতর বাড়িতে গোপালের মা আসলো। বয়স তিন কুঁড়ি ও বেশি হবে হয়তো।
দুইটা লেবু দেও তো । গোপালের বউয়ের মাথার বিষ
কয়দিন থাকি খাবারে পায়না ।
গোপালের ঘরের খাবার শেষ । সারাদিন বিছানাতেই শুয়ে থাকে খুক খুক করে শুকনো কাশি দেয়। পাড়ার সবাই জানে বিড়ি খাওয়ার দরুনে এই কাশি ছাড়ে না।
রাম চরণের মা লেবু এনে দেয়।
গোপাল তার বৌকে পিটিয়ে আধমরা করেছে।
রাম চরণের মা বলে "গোপাল কোটে থাকে এল্যা কাম করব্যার পায় না।"
রাম চরণের গোপালের মায়েরে বলে,
"গোপাল দার যদি খাওয়া দাওয়া অভাব আমার বাড়ি আসি তো টাকিটুকি কাম করির পায় । এ্যাঁটে খাওয়া দাওয়া কইরবে।"
"অ বাবা রাম" অই বুজি পাগলা হইছে, সারাটা দিন ঘরের ভেতর থাকে কারো সাথে কথা কয় না।
গোপাল মানসিকভাবে পাগল হয়েছে প্রায়। বৌকে মার ধর করেছে এই সময়ে তার বিচার ও করতে চাচ্ছে না কেউ । ওর ওষুধ পথ্যি চিকিৎসা করা দরকার।
গোপালের ছেলের এ ব্যাপারে মাথা ব্যথা নাই, সে একদম মায়ের পক্ষে। সেদিন তো ওর বাবার কাছে। থেকে লাঠি কেড়ে নিতে গিয়ে পাড়ার মানুষ সবাই ছেলেটাকে বদনাম দিলো। মায়ের উপর নির্যাতন দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত। তাই বাবার প্রতি তার কখনো করে ঘৃণা হয়। যতোই হোক বাবা তো। তারপরে ও কোনোদিন অসম্মান করে নাই।
গোপাল দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছে, সংসারে অনটন আরো চেপে বসেছে। ভাইরাসের এককালীন টাকা মোবাইলে পেয়েছে তার উপর আবার মাছিদের দৃষ্টি। তাড়াতাড়ি করে যা থাকে তাই দিয়ে দুদিনের বাজার খরচ
ডাল ,ভাত।
অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। গোপালের মা নাই গোপালের মাসির বাড়ি গেছে। বেচারির পোটলার চাউল, সব গুলো সাবাড় করেছে গোপাল। পাড়ার শিক্ষিত যুবক ছেলে গোপালের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতেছে। গোপালের বউ এখন একটু সুস্থ্য প্রতিদিন কাজ করে চাউল কিনে খায়... চাউল ও নেই চাল ও নেই হাজারো বিচ্ছিন্ন মেঘ টুকরা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে দুচোখে তর্জনী ঘঁষে কিঞ্চিৎ লোনাজলে স্বপ্নে অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব আঁকে।
আরো পড়ুন -->>
0 মন্তব্যসমূহ
অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।