বাবাকে, রাজকুমারী
ইসরাত জাহান ইতি
জানো বাবা, তোমার সাথে সেদিন এর প্রভাতটা কত মনোমুগ্ধকর, কত মধুর,কত আবেগের ছিল!!!
সেই ফজরের নামাজের পর কাক ডাকা ভোরে তোমার সাথে হাঁটতে গিয়েছিলাম সেই নদীর পাড়ে, তুমি আমাকে গ্রাম দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলে। তুমি আমাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখাচ্ছিলে। জানো সেই মুহূর্তগুলো কত আনন্দময় ছিল!তোমার সাথে না বেরোলে হয়ত বুঝতেই পারতাম না তুমি এতটা দামী।তুমি মানুষের এত ভালোবাসার একজন।জানো বাবা সেদিন এর কোন মুহূর্তটা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল?ঠিক সেই মুহূর্তটা যখন তোমাকে আর আমাকে দেখে গ্রামের সেই অসহায় পীড়িত মহিলারা পিড়ি পেতে বসতে দিয়েছিল, আর তোমার বসার চেয়ারটা তাদের সেই কুচকো শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিয়েছিল । আমি তো কল্পনাও করতে পারিনি যে তুমি মানুষের হৃদয়ের এতটা কাছাকাছি বসবাস কর।
তোমার সাথে যখন হাঁটছিলাম তোমার মামা চাচারা তোমায় দেখে বলছিল তোর মেয়েটা বড্ড ভালো, তোর মতোই সুন্দর সুনির্মল হৃদয় ।জানো তখন কত সুন্দর একটা অনুভূতি হচ্ছিল আমার!তুমি হয়ত বুঝতেই পারনি সেই মুহূর্তে তোমার জন্য ভিতরে ভিতরে আমার কতটা গর্ব হচ্ছিল!
তারপর মনে আছে তোমার, তুমি আর আমি ফাঁকা মেঠো পথ দিয়ে হাঁটছিলাম।মাঝে মাঝে মাঝিরা যাচ্ছিল বড় বড় ড্রাম নিয়ে মাছ ধরতে।কি যে আনন্দময় ছিল মুহূর্তগুলো!!! আমি হাঁটছিলাম আর তুমি আমাকে চারপাশের জিনিসগুলোর word meaning শেখাচ্ছিলে।
তারপর আমারা যখন হাঁটতে হাঁটতে চায়ের দোকানের কাছে আসলাম,তুমি আমাকে এক কাপ চা খেতে বললে,কিন্তু আমি খেলাম না।সেই মুহূর্তে যে তোমার আর প্রকৃতির সঙ্গ পেয়ে ক্ষুধার কথা কখন ভূলে গিয়েছিলাম মনেই ছিল না।
জানো বাবা, আমার না এখনও সেই ছোট্ট ছেলেটার কথা মনে পড়ে যে রাস্তায় তোমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে গিয়ে বলেছিল, ' I am a son of velka.My father's name is velka' 'ভেলকা' নামটা আমার কাছে একটু হাস্যকর ছিল বটেই। সেই সময় আমার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গিয়েছিল।ছেলেটা বেশ মজার ছিল । জানো এখন তাকে দেখলেই মনে হয় আমাকে হাসানোই যেন ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ।হা হা হা হা!
তারপর আমারা যখন প্রায় নদীর কাছাকাছি যাই তখন তখন তুমি আমাকে সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্যটা দেখাচ্ছিলে।আমার যে তখন কি অসাধারণ একটা অনুভূতি হচ্ছিল বলে বোঝাতে পারব না ।
সে যাক,নদীর তীরে সেই ভোরবেলা যখন তুমি ওপারের মাঝিগুলোর তুমি হাসতে হাসতে কথা বলছিলে আমি তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এরাও তোমায় কত আপন করে নিয়েছে!! তুমি সত্যিই খুব সৌভাগ্যবান আর সুখী বাবা তুমি এনাদের মতো অতি সাধারণ আর সরল মানুষ গুলোর ভালোবাসা পেয়েছো। কীভাবে এটা অর্জন করলে বাবা? এখন যে তোমার মেয়েটারও dream এদের মাঝেই এত সব ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার ।
বাবা জানো আরও একটা সময় আমার অসম্ভব ভালো লেগেছিল,,,,,কখন জানো???যখন গ্রামের সেই বৃদ্ধ অর্থাৎ আমার দাদীমার বয়সের মহিলাগুলো তোমায় জিঞ্জাসা করছিল আমি তোমার কে হই?আর তুমি কি অসাধারণভাবে বলেছিলে, এ কে? এ তো আমার মা। আমার মা কে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি।" ঠিক তখনই যেন আমি মাতৃত্বের একটা সুখ অনুভব করছিলাম ।আমার দাদীমা হয়ত তোমায় খুব ভালোবাসত। হয়ত কি বলছি খুব ভালোবাসাত।এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না ।
জানো বাবা, দাদীমা বেঁচে থাকতে তাঁর কাছে তোমার কত গল্প শুনেছিলাম ।তুমি ছোট বেলায় কেমন ছিলে,কেমনে চলাফেরা করতে এসব।তোমার সেই ছোট্ট বেলার গল্প শুনতে আমার বেশ মজাই লাগত।দাদী মা বলত ছোটবেলায় তোমাকে নাকি বোকা বানানো ছিল খুবই সোজা ।অবশ্য তার প্রমাণ এখনও মেলে।তোমাকে যে কত বোকা বানাই!!! আমায় নিয়ে তুমি যখন পড়াতে বসতে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তে তখন তোমার পকেট থেকে ১ টাকা, ২টাকা ও ৫ টাকার কয়েনগুলো চুরি করতাম।সুযোগ পেলে এখনও করি।হা হা হা!!
আর তুমি আমাকেপড়াতে পড়াতে যখন সত্যিই সত্যিই ঘুমিয়ে পরতে, তখন আমি মনে মনে খুব খুশী হতাম।কারণ পড়ায় ফাঁকি দেয়ার একটা সুযোগ মিলত। আমার কিন্তু বেশ লাগে তোমায় এভাবে বোকা বানাতে।
সে যাক, নদীর পাড়ের গল্প বলতে অন্য দিকে চলে গেছি।
আচ্ছা বাবা, তোমার কি মনে পড়ে সেদিন তুমি আমাকে একটা কথা দিয়েছিলে???
থাক সেকথা বলব না। দেখি তোমার দেয়া কথা মনে রাখতে পার কি না!!!
আমার আরও মনে পড়ছে, সেদিন যখন তুমি আমাকে নদীর উপরে রেখে ঘাটে গিয়েছিলে মাছ কিনতে।তখনও আমি তোমায় দেখছিলাম তুমি কীভাবে মাছ কেন!! জানো সেদিন ও তোমায় দেখে বোকা বোকা লাগছিল ।সবাই মাছ কিনছিল আর তুমি সিরিয়ালই পাচ্ছিলে না অন্যকে আগে সুযোগ করে দিতে বেহুঁশ ।তখন তোমায় দেখে মনে মনে ভাবছিলাম এজন্যই হয়ত তুমি এত সুখী!!ঠকানো কি সেটা যেন তুমি বোঝই না! আচ্ছা মানুষ কি কখনও এত সরল হয়? তুমি এত ভালো কেনো বাবা??অবশ্য তোমাকে এসব বলে লাভ কি! তুমি তো এমনই।
যে মানুষটি নদীর তীরে বসে নদীতে বড় বড় ঢিলা দিয়ে ঢিল মেরে জলের ঢলমল তরঙ্গ দেখাকে জীবনের aim in life মনে করত তার কাছে সুখ তো এমনই হবে।
হ্যাঁ বাবা, আজ সত্যিই মনে হয় তুমি খুব সুখী ।
(সংক্ষেপিত)
বাবা, তোমাকে নিয়ে লেখা শেষ করা কখনই সম্ভব নয় ।পৃথিবীর কোনো কগজকল এখনও এতো কাগজ উৎপাদন করতে পারে নি যেগুলো তে তোমার বিষয়ে লিখে শেষ করতে পারব। যদি কখনও তোমার সময় সুযোগ মেলে তাহলে তোমার দেয়া ডায়েরিতে আমার লেখাগুলো পড়ে নিও তাহলে নিজেকে একটু চিনতে পারবে তুমি । আর আমার একটা আশা জীবনে এই নদীর পাড়ের মত অন্যান্য জায়গায় গুলো তোমার সাথে ঘুরতে পারি আর এভাবেই যেন মানুষের সাথে মিশে যেতে পারি।
ইতি
তোমার রাজকুমারী
বাবা দিবসে, তোমাকে আমার সেদিনের লেখা চিঠিখানি উৎসর্গ করলাম। তোমার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন হয়না। তোমার সাথে প্রতিটি দিনই সমান বিশেষ আমার কাছে। ভালোবাসা নিও।
পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।❤️
আরো পড়ুন -->>
11 মন্তব্যসমূহ
শিশুতোষ রচনা৷
উত্তরমুছুনঅযথা সময় নষ্ট
আলালের ঘরের দুলালী
উত্তরমুছুনফকিন্নী মাইয়ারাও আইজকাইল নিজেরে প্রিন্সেস ডায়না মনে করে৷ ফক্কিন্নী কুনহানকার
উত্তরমুছুনপ্রিন্সেস ডায়না আইছে! বাংলাদেশের ফকিন্নিগুলা নিজেকে সব রাজকুমারী মনে করে ক্যা
উত্তরমুছুননাজনীন সুলতানা
উত্তরমুছুনআপনি কোন ঘড়ের রাজকুমারী,নিজে নিজেকেই আগে বিচার করুন
তার পরে মন্তব্য করুন
ধন্যবাদ
আমি তো নিজেকে রাজকুমারী দাবি করিনি৷ এই ফকিন্নী সেটা করেছে৷
মুছুনএখানে কবি তার মনের ভাব প্রকাশ করেছে মাত্র
মুছুনআপনার সমস্যাটি কথায়
এখানে আলতু ফালতু কমেন্ট করার জায়গা নয় কেমন
আপনি যদি লিখতে যানেন তাহলে আপনার লেখা পাঠিয়ে
দিয়েন কেমন
ভালো থাকবেন।
নাম গোপন করে আর যদি কমেন্ট করিস তোর থোতা ফাটাব৷
মুছুননয়ন সরখেল
মুছুনসম্পাদক
অনুশীলন
এই সাইডে এই রকম আজে বাজে মন্তব্য করবেন না
তাহলে কপালে দুঃখ আছে
আপনি একটি মুর্খ নারী
এই ভাবে একটি সাইডে ঝগড়া করা ঠিক নয়
আপনি লেখকের লেখা পরেছেন ভালো কথা
সব লেখকের লেখা যে ভালো লাগবে আপনার সেটা না
তাই না
আপনার লেখা ভালো লাগেনি আপনি লিখুন
লেখকের উদ্দেশ্যে
যে আমার লেখাটি ভালো লাগেনি
পরবর্তীতে আরো ভালো লেখা চাই
একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকায় এসে আজে বাজে মন্তব্য করবেন সেটা তো ঠিক না তাই না
মনে হচ্ছে আপনি তো একজন নারী
এই ভাবে একজন নারী লেখককে এই ভাষা প্রয়োগ করা আপনার ঠিক হয়নি
যারা নতুন লিখছে তাদের কে উৎসাহ দিন
পরবর্তীতে আরো নতুন নতুন লেখা আসবে
আপনিও লেখা দিন
এই সাইডটি জ্ঞান অর্জনের
ভালো থাকবেন
সুস্থ থাকবেন।
আবু হেনা
উত্তরমুছুনসময় নষ্ট করে পরার জন্য
ধন্যবাদ।
আমরা রাজা ও রাজতন্ত্রকে গালি দিতে দিতে জীবন কাটাই, আর নিজের মেয়ের জন্মদিনে বলি: আজ আমাদের “রাজকন্যার” জন্মদিন।
উত্তরমুছুনকেন? আমাদের মনের ভিতরে কী?
অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।