দেবাশিস সাহার কবিতা

পিং পিং বল


ব্যধি সরে সরে আসে
দীর্ঘ  হতে হতে
কবরে নেমে যায় রাস্তা

ব্যলট নেই বুলেট নেই
এক অশরীরী যুদ্ধ 
যাবতীয় আয়োজনকে 
পিং পিং বল ভেবে 
মেরে যাচ্ছে ছক্কার পর ছক্কা 

নানা বর্ণের
দামী রঙের 
সামরিক সাজোঁয়া আজ খেলনা 
খেলনানগরের নখ দাঁতহীন সম্রাট 
শুকনো পাতার মতো গর্জায়
পাশ দিয়ে বয়ে যায় লাশনদী

দৌড় 


ঘোড়া মারা গেলে
গাছজন্ম

পালিয়ে যাবার ইচ্ছে থাকলেও
পা রেখে 
যেতে পারেনা কোথাও 

জান বাজী রেখে
কিনে আনে ডানা

গাছের দৌড় 
সেই ছাদ পর্যন্ত 

লতিয়ে লতিয়ে...

মানুষ মারার কল


অসুখের কোনো দেশ হয়না সাগরী
খিদে মানেনা কোনো সীমান্ত 
এক অসুস্থ বাতাস
মুখে সময় নিয়ে
উড়ে বেড়ায়
 আলোর আগে আগে
ভালোর আগে আগে

অসুখের ইশারায় 
আজ বন্ধ ধর্মের সমস্ত দরোজা 
কবরে তিল ধারনের জায়গা নেই
চোখ থেকে উধাও 
আনন্দের দিনগুলি রাতগুলি 

অসুখ আজ গর্ভে 
অসুখ আজ অসুর ও ভগবানের 

একহাতে দিন আরেক হাতে রাত নিয়ে
ঘরে বসে মানুষ 
পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে উৎসব 
মাথার উপর দিয়ে
চলে যাচ্ছে সুখ রঙের ঘোড়া 

ঘোড়ার মুখের খবর নিয়ে
অসুখ বয়ে যাচ্ছে 
দেশের পর দেশ

অসুখের মুখে আজ
মানুষ মারার কল। 

অসুখ 


অসুখের ভিতর 
যাতায়াত করে অন্ধকার 

লালারস রক্ত-আমাশা

শাপ লেগে গেছে হাড়ে

দূরে দূরে সরে যায়
প্রিয় ছাদ 
বোগেনভোলিয়াকে জড়িয়ে জড়িয়ে 
সূর্যস্নান করে শালিখ দম্পতি 
পড়ে থাকে আত্মাহীন খোলস

এই অবসরে
খোলসে খেলা করে প্রিয় ঈশ্বর 

তুমি খোলস সাজিয়ে তুলছো
কান্নার অলংকারে
গোপনে পাচার করে দিচ্ছো অসুখ

অসুখের গভীরে 
নামহীন গোত্রহীন এক সুখ
যাতায়াত করে জন্মের পর জন্ম। 

ফুঁ


বাঁশী জন্মের লোভে
ফুটো সঞ্চয় করে বাঁশ

শূন্য থেকে গড়িয়ে আসা ফুঁ
ধারণ করে গর্ভে

বেজে ওঠার আগে
ফুঁ আর ফূটো
কাছাকাছি আসে

ঘি আর সলতে
অপেক্ষা করে আগুনের। 

 কুটুম


 রোদে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
 গাছ আমাদের কুটুম
আমাদের অসুখ 
ধর্মান্তরিত হয়ে গাছেদের সুখ
তুমি গাছের বান্ধবী
ক্লান্ত রাস্তার পায়ের নূপুর
ছুয়েঁ থাকা পাপ 
দু-হাতে নদী ছুটিয়ে জয় করছো আলো ।

পাপের দেবী


কৌশলের উপর পা রেখে
হেঁটে যায়
আত্মরক্ষার দিকে

পাপ ছোঁবে বলে
অনন্ত সিঁড়ি উঠে গেছে
তারাহীন অন্ধকার ঘরে

নীচে ধূসর খিদে 

ছাইতন্ত্র ঘেঁটে 
দেখা গেছে 
খিদের শর্টকাট পাপ

পাপের দেবী
যে মেয়েটি
সে গতজন্মে ছিলো
আমার প্রেমিকা।

শোকচিহ্ন


সাপ রঙের রাস্তায়
পড়ে আছে এলোমেলো খই
কানা আধুলি আর ভাঙাচোরা পায়ের ছাপ

কে যেন এসে 
আমাদের পাড়ায়
 এঁকে দিয়েছে শোকচিহ্ন

হ্রদে নেমে
ভালোবাসা তছনছ করে দিয়ে
চলে গেলো একটা গোঁয়ার রাত

অজান্তেই একটা রাস্তা 
এসে যায় ঘর পর্যন্ত 
লালটুকু নিয়ে চলে যায়

চলে যায় চোখ ছাড়িয়ে 

মিথ্যেগুলো পড়ে থাকে 
সত্যের কঙ্কাল কাঁধে 
হেঁটে যায় শ্মশানবন্ধু

শোক গায়ে ঘুমিয়ে পড়ে পাড়া

শোধ-প্রতিশোধ


মৃত শিশুর হাতে বাতিল খেলনা
খেলনা নগরীর শেষ কান্না
ধাক্কা খাচ্ছে গম্বুজে গম্বুজে

তুমি সংশোধন করতে চায়ছো
জীবনের প্রথম ও প্রধান ভুল
যে বদলে দিয়েছে
তোমার ভুগোল ইতিহাস 

মার খেতে খেতে 
ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি 
শোধ প্রতিশোধের খেলা 

তোমাকে বন্দী করে
রাস্তায় নেমেছে বিপন্নতা 
সমস্ত অস্ত্র আজ ভোঁতা
অসংখ্য নিরুপায় দৃষ্টিপাত
নিস্পলক দাঁড়িয়ে থাকে 

 শুধু একটি অন্ধ প্রজাপতি 
সবার অলক্ষ্যে 
এক মুঠো রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে
আমাদের অসহায় জীবনের খাতায়৷

ত্যাগ


কান্না বদল করবে বলে
দরোজায় এসে দাঁড়ায় 
দুটি কাঠ

নিরিবিলি হলে
গাছেদের সংসারে আসবাবের গল্প

অবিবাহিত জানালার অবৈধ প্রেম

ফাঁক পেলেই
উকিঁ দেয় পরকীয়া চোখ

অন্যকে সুখ দেবে বলেই
বিছানার নীচে 
গাছেদের এই আত্মত্যাগ 
মনে রেখেছে বেবুশ্যা রাত।
আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ