কানিজ ফাতেমার প্রবন্ধ: ‘শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য ও আমাদের করনীয়’

 

ভূমিকা: প্রতিমুহূর্তে আমরা শিখতে শিখতে এগিয়ে যেতে থাকি জীবনের পথে। জীবন আমাদের হাতে কলমে শিখিয়ে তবেই তার ঐশ্বর্য আমাদের হাতে তুলে দেয়। জীবনের অতুলনীয় সৌন্দর্য  উপভোগের জন্য তাই শিক্ষা লাভ করা জরুরী। শিক্ষা আসলে কী? স্কুল কলেজের সিলেবাসের মাঝে আটকে থাকা জ্ঞানই কী প্রকৃত শিক্ষা? প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে!! এর উত্তর খুঁজতে যেতে হবে কিছুটা পেছনে,চোখ রাখতে হবে ইতিহাসের পাতায়,মন রাখতে হবে নতুন দিনের নতুন ভাবনাকে গ্রহণ করায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারলে পিছিয়ে যেতে হবে ,আর আমরা পেছালে পিছিয়ে যাবে জাতি।ধূলি-ধূসর বিবর্ণতা ঘিরে ধরবে নবাগত প্রজন্মকে।

শিক্ষা :  শিক্ষার কাজ হলো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য সকল প্রকার দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হয়। এককথায় বলতে গেলে তাই বলা যায়,জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা।  শিক্ষা তখনই পূর্ণতা পায় যখন মানুষ তার সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য অব্যাহত অনুশীলন করে থাকে। অর্থাৎ শিক্ষা লাভের প্রক্রিয়াটি সাময়িক নয় এবং কোন প্রকার পদ্ধতির মাঝে শিক্ষা আটকে গেলে তা শিক্ষার্থীর পরিপূর্ন বিকাশে কেবল অন্তরায় ঘটায় না, বরং বিকাশ প্রক্রিয়াকে মূল সমেত উৎপাটিত করতে বদ্ধ পরিকর হয়ে ওঠে।
 শিক্ষার মূল কাজ মানুষের আচরণগত পরিবর্তন সাধন। বোধ,বিবেক,মন ও মননহীন মানব শিশু শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই  অর্জন করে জ্ঞান , দক্ষতা ,দৃঢ়তা, বিশ্বাস, এবং অভ্যাস । একারণে শিক্ষা মুহূর্ত তরে থেমে গেলে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশমূলক প্রক্রিয়া চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয় । একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি যখন গাড়ির কাঁচ নামিয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে চলে যান অথবা একজন পথচারী পথ চলতে গিয়ে যখন উপড়ে ফেলেন একটি জীর্ণ চারা তখনই বোঝা যায় তাদের শিক্ষা পূর্ণতা পায়নি।মূলত  শিক্ষা মানুষের বোধকে জাগ্রত করে তাকে সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে ওঠার পথ দেখায়।
শিক্ষা শব্দের আভিধানিক অর্থ: বাংলা, ইংরেজি ও ল্যাটিন মিলিয়ে কয়েকটি শব্দ আমাদের চারপাশে রয়েছে যা শিক্ষা শব্দের উৎপত্তির সাথে সম্পর্কিত। সে শব্দগুলো বিচার ও বিশ্লেষণ করলে শিক্ষা সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা লাভ করা যায়।
১.সংস্কৃত ‍'শাস' ধাতু  যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। আবার ‘বিদ্যা শব্দের ’সংস্কৃত‘ বিদ’ এর অর্থ হল  জানা বা জ্ঞান অর্জন করা ।
২. প্রথম মত: ইংরেজি Education ল্যাটিন শব্দ Educare থেকে এসেছে। আর ল্যাটিন Educare অর্থ হল To bring up  অর্থাৎ কর্ষণ করা, প্রতিপালন করা, পরিচর্যা করা, অন্তর্নিহিত চেতনার বিকাশ সাধন করা।
দ্বিতীয় মত: Education ল্যাটিন শব্দ ল্যাটিন Educere থেকে উদ্ভূত , যার ইংরেজি অর্থ হচ্ছে To lead out অর্থাৎ শিশু এবং শিক্ষার্থীর মনের মধ্যে যে সব মানসিক শক্তি জন্মসূত্রে বিদ্যমান সেগুলিকে বাইরে আনা ।

তৃতীয় মত: Education ইংরেজি শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Educatum থেকে এসেছে, যার অর্থ হল- The act of training । এই মতানুযায়ী শিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিশু বা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন উপযোগী কিছু কৌশল আয়ত্ত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া ।
চতুর্থ মত: Education শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Edex এবং Duccrduc শব্দগুলো থেকে। যার শাব্দিক অর্থ হল যথাক্রমে বের করা ,পথ প্রদর্শন করা , তথ্য সংগ্রহ করে দেয়া এবং সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করা ।
অর্থাৎ শিক্ষা প্রক্রিয়া ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার জন্য পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে  সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত জীবন যাপনে সহয়তা করে।
শিক্ষার সংজ্ঞা : শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গুণীজন অনেক কথা বলেছেন এবং সবাই মিলে একটি সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হননি। এর কারণ শিক্ষা ব্যক্তি বিশেষের কাছে ভিন্নতা নিয়ে উপস্থিত হয়। কৃষকের কৃষি কাজের জন্য ডাক্তারী বিদ্যা যেমন অকেজা তেমনি বিল্ডিং নির্মাণে আপাত ভাবে কাব্য শিক্ষার তেমন প্রভাব নেই বললেই চলে । মনীষীগণও আপন আপন অনুভবের তীক্ষ্ম তীরে শিক্ষার সংজ্ঞা বিদ্ধ করেছেন। এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি চিন্তাবিদদের ধ্যান ও ধারণায় রয়েছে বিস্তর প্রভেদ। তবে অল্প বিস্তর পার্থক্যকে স্বীকার করে নিয়ে বলা যায়, সকলে সত্য সুন্দর আর উৎকর্ষ সাধনকেই শিক্ষা বলেছেন।  প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাবিদদের ধারণায় শিক্ষা :
উপনিষদ:  শিক্ষা মানুষকে সংস্কারমুক্ত করে তোলে।
ঋগবেদ : শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মত্যাগী করে তোলে।
কৌটিল্য:  শিক্ষা হল শিশুকে দেশ বা জাতিকে ভালোবাসার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কৌশল।
শঙ্করাচার্য: আত্মজ্ঞান লাভই হল শিক্ষা।
 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর : তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা, যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না , যা বিশ্ব সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে। 
গান্ধিজী : ব্যক্তির দেহ , মন ও আত্মার সুষম বিকাশের প্রয়াস । 
স্বামী বিবেকানন্দ : মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশই হল শিক্ষা । 
এছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদগণের মতানুযায়ী শিক্ষা :
সক্রেটিস : শিক্ষার উদ্দেশ্য হল মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিষ্কার।
প্লেটো : শিক্ষা হল শিশুর নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী দেহ মনের সার্বিক বিকাশের সহায়ক প্রক্রিয়া।
অ্যারিস্টটল: শিক্ষার্থীদের দেহ মনের বিকাশ সাধন এবং তার মাধ্যমে জীবনের মাধুর্য ও সত্য উপলব্ধিকরণ।
রুশো : শিক্ষা হল শিশুর স্বতস্ফুর্ত আত্মবিকাশ , যা মানব সমাজে সকল কৃত্রিমতা বর্জিত একজন স্বাভাবিক মানুষ তৈরীতে সহায়ক। 
জন ডিউই : শিক্ষা হল অভিজ্ঞতার অবিরত পুনর্গঠনের মাধ্যমে জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া।
ফ্রয়বেল : শিক্ষা হল অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার উন্মেষ সাধন ।
অর্থাৎ শিক্ষা মানুষের দেহ,আত্মা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করে । সেই সাথে শিক্ষা মানব প্রবৃত্তিগুলোকে পরিচর্যা ও পরিশোধন করে মানুষের সর্বপ্রকার  জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান দিয়েই মানুষ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালিত করে।  এবং অজানাকে জানার ইচ্ছাকে উদ্বেলিত করার মধ্য দিয়ে শিক্ষা মানুষকে সকল সীমাবদ্ধতার গণ্ডি পেরিয়ে অসীম ও অনন্তের সন্ধান দেয়।
শিক্ষার ধারণা : সমাজে সাধারণত শিক্ষা সম্পর্কে দুটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। প্রথমটি সম্পর্কে এতক্ষণ আলোচনা করা হয়েছে এবং সেখানে ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে কী বোঝান হয় তা বোঝান হয়েছে। ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হল এটি জীবনব্যাপী ক্রমবিকাশ প্রক্রিয়া। এই শিক্ষা শিশুর জন্মগত সামর্থ্য , অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ও স্বতঃস্ফুর্ত চিন্তাশক্তির সাথে সম্পর্কিত। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী হয়ে থাকে  এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর আচরণের পরিবর্তন  ও মূল্যবোধের বিকাশের উপর অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকে।  
অপরদিকে রয়েছে ,সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার ধারণা বলতে বোঝায় কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট বিষয় শিক্ষকের দ্বারা পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চালন করা । এ শিক্ষার মূল প্রবণতা হলো হাতে হাতে ফল প্রাপ্তির জন্য সংগ্রাম করা । এছাড়া ডিগ্রীলাভ ও সার্টিফিকেটে ভালো নম্বর উত্তোলন করা এ শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। এ শিক্ষা বিদ্যালয়কেন্দ্রিক,পুথিনির্ভর, শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত,অপরিবর্তনীয় ও গতিহীন প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশ সাধন করার চেয়ে কোন বিষয়ে পড়লে চাকরী পাওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে তাকেই এখানে উৎসাহীত করে। একারণে উদারনৈতিক মনোভাব গঠনে সহায়তা না করে এ শিক্ষা শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মন্ত্রণা দেয়। শিক্ষা এবং শিক্ষালয়ের সাথে যিনি ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকেন তিনি হলেন শিক্ষক।
শিক্ষক : শিক্ষক হলেন তিনি যিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভে সহায়তা করে থাকেন। শিক্ষার অর্থ যদি হয় জানা বা জ্ঞান অর্জন করা । তবে শিক্ষকের কাজ জ্ঞান অর্জনের সহায়ক হওয়া। আর যদি বলেন ,শিক্ষা অর্থ কর্ষণ করা, প্রতিপালন করা, পরিচর্যা করা, অন্তর্নিহিত চেতনার বিকাশ সাধন করা। তবে শিক্ষকের ধর্ম হবে শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ সাধনে তৎপর থাকা। অভিধান খুললে শিক্ষক শব্দের অর্থ হিসেবে পাওয়া যায় -অধ্যাপক, শিক্ষাদাতা, উপদেষ্টা, গুরু, শাসনকর্তা ইত্যাদি শব্দ সমূহকে। বর্তমান সময়ের পেক্ষাপটে শিক্ষকরা এই সকল শব্দের গুরুভার মুক্ত। সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে, শিক্ষক কে-এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, শিক্ষক হলেন তিনি, যিনি শিক্ষার্থীর জ্ঞান স্পৃহাকে প্রজ্জ্বলিত করেন, তাকে স্বপ্ন দেখতে সহায়তা করেন,তার সৃজনীশক্তি বিকাশে সাহায্য করেন,তাকে নতুন পথ আবিষ্কারে অনুপ্রাণিত করেন,তার প্রাপ্তিতে প্রশংসা করেন,ভুলে সংশোধন করেন এবং তাকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়ে পথ চলতে সহায়তা করেন। এই শিক্ষকিরা কাণ্ডরীরূপে শিক্ষার্থীদের মাঝে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংস্থাপনে চেষ্টা চালিয়ে চান।
লক্ষ্য : শিক্ষার লক্ষ্য যে মোটেও চাকরী পাওয়া নয় তা বোঝনই মূলত শিক্ষার লক্ষ্য অর্থাৎ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের বিকাশকে কার্যকরী ও ত্বরান্বিত করে তাদের পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা , যাতে করে তারা তাদের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে উন্নততর ও সার্থক সংগতি বিধান ও অভিযোজন করে স্বপ্নময় জীবন গড়ে তুলতে পারে। অ্যারিস্টটলের ভাষায়  বলা যায়, “Every art does something good, Education is an art. It is to be seen what good is done by Education to man and society.“ শিক্ষা একটি পরিবর্তনশীল নিরবচ্ছিন্ন গতিশীল সচেতন সামাজিক প্রক্রিয়া । তাই শিক্ষার লক্ষ্য যুগে যুগে দেশে দেশে নানারূপে প্রকাশ পেয়েছে। প্রাচীনকালে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল আত্মজ্ঞান বা আত্মউপলব্ধি । কিন্তু আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটিয়ে উপযোগী সুনাগরিক রূপে গড়ে তোলা ।সংক্ষেপে শিক্ষার লক্ষ্যগুলি হল :
(ক) শিক্ষার লক্ষ্য জ্ঞানার্জন করা ।
(খ) শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুর নৈতিক চেতনা জাগ্রত করা।
গ) শিক্ষার লক্ষ্য হল সমাজের অতীত কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ধারার সঙ্গে পরিচিত করে নিজস্ব সাংস্কৃতিক সত্তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ঘটানো ।
(ঘ) চরিত্রকে বলিষ্ঠ ও কর্মঠ করাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ।
(ঙ)  শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো  বিকাশমান আত্মার অন্তর্নিহিত সত্তাকে জাগ্রত করে মহৎ উদ্দেশ্য তাকে গড়ে তোলা ।
(চ) শিশুকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা, যাতে নিজেকে প্রকাশিত করার সমস্ত গুণাবলী তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে ।
(ছ) বৃত্তিশিক্ষা বা হাতে কলমে শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীকে জীবিকা উপার্জনে সক্ষম করে তোলা।
(জ) শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল সমাজের আচরণগত , রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলিকে নবীন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ।
(ঝ) প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ঘটানো ।
(ঞ) শিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল বিভিন্ন পরিবেশের সাথে যাতে শিশু সার্থক সংগতি বিধান করে চলতে পারে ।
(ট) গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি সাম্যবাদ, শ্রেণী বৈষম্য-হীন সমাজ , সহযোগিতাবোধ ও ভ্ৰাতৃত্ববোধের বিকাশ।
অর্থাৎ শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তির নিজস্বতার উপলব্ধি ও আত্ম-উন্মোচন। যা দ্বারা সে দেশ ও দশের কল্যাণে আপনাকে নিয়োজিত করবার মধ্য দিয়ে বৃহতের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আবার শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারিত হয় শিক্ষার্থীর বয়স,রুচি,মেধা,বয়স,দেশ ও কালের বিবেচনায়। ফলে একটি সময় ও সমাজের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার লক্ষ্য কিছুটা পাল্টে যায়। বাংলাদেশ সরকারেরর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ‍শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার যে লক্ষ্যগুলো নির্ধারেণ করেছেন সেগুলো হল:
মূল্যবোধভিক্তিক শিক্ষার প্রসার;
চাহিদা মাফিক ও চাকুরির যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষা;
পাঠ্যক্রম-এর আধুনিকায়ন
সকল স্তরে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা উন্নয়ন;
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার জোরদারকরণ;
সকল স্তরে শিক্ষকদের কাযকারিতা নিশ্চিতকরণ;
জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণ।
 শিক্ষার সাধারণ উদ্দেশ্য: শিক্ষার লক্ষ্যের মতো এর কিছু উদ্দেশ্যও রয়েছে এবং নানামুনির নানামতে শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়েও রয়েছে জটিল সব তাত্বিক আলোচনা।  সেসব এড়িয়ে আমরা মূলত বাংলাদেশ সরকারেরর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ‍শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার যে উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারেণ করেছেন সেগুলোকেই তুলে ধরার চেষাটা করবো:

ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলির যেমন: ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি বিকাশ ঘটানো।
জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা।
দেশজ আবহ ও উপাদান সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর চিমন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতার উজ্জীবন এবং তার জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করা।
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী ও উৎপাদন সহায়ক করে তোলা; শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা করা।
জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য ও নারী পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা। শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।
গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্ত্তনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।
মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিমত্মাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিসত্মরে মানসম্পন্ন প্রামিত্মক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
বিশ্বপরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিষয়ে উচ্চমানের দক্ষতা সৃষ্টি করা।
জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল) বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং সংশিস্নষ্ট অন্যান্য (গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি) শিক্ষাকে যথাযথ গুরম্নত্ব প্রদান করা।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ-সচেতনতা এবং এতদসংক্রামত্ম বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।
দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।
সব ধরনের প্রতিবন্ধীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।
উপরে শিক্ষা,শিক্ষক এবং দেশ ও কালের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করে আমরা যা বোঝার বা বোঝানর চেষ্টা করলাম তা আমাদের বর্তমান সময়ে শিক্ষা সম্পকীর্ত ধারণার সর্ম্পর্ণ বিপরীত। শিক্ষা মানে এখন ভালো একটা স্কুল ,সুদর্শন শিক্ষক, ঝলমলে শ্রেণিকক্ষ, আটসাট সিলেবাস ,আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কড়া সিকিউরিটি সিস্টেম। শিক্ষা এবং শিক্ষালয়ের মাঝে যে বিস্তর প্রভেদ রয়েছে তা আমরা আমাদের সূক্ষ্ম দৃষ্টি না থাকার দরুণ বুঝতে পারি না। শিক্ষালয় শিক্ষাকে একটি কাঠমোবদ্ধ রূপ দেয় যেন রাষ্ট্রের সকল শিশু একটি নিদির্ষ্ট অবকাঠামো বা অবলোকন সীমার মাঝে থেকে সঠিক পরিচর্যাটা পায়। প্রাগৈতিহাসিক কাল হতেই শিক্ষা দান বিষটি ছিল তবে শিক্ষা কেবল শিক্ষালয় আর শিক্ষক কেন্দ্রিক ছিল না। তখন মানুষ শিখতো জীবন থেকে ,আশেপাশের প্রকৃতি পরিবেশ থেকে ,বয়স্ক মানুষের থেকে,মা-বাবা ও পরিবার থেকে। প্লেটোর‘একাডেমী’,এরিস্টটলের ‘লাইসিয়াম’ বা কনফুসিয়াসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ শিক্ষালয়ের প্রথম ধারণা প্রদান করলেও প্রথাগত বা নিয়ম-মাফিক শিক্ষাদানের প্রথা গত দেড়শো-দুশো বছরের । এই প্রথায় শিক্ষাকে প্রচণ্ডরকমভাবে বিদ্যালয়ের চারদেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবল কিছু কাগজের সার্টিফিকেট প্রাপ্তির হাতিয়ার মনে করা হয়। শিক্ষাকে এখানে দক্ষতা অর্জনের উপায় হিসেবে না নিয়ে চাকরী পাওয়ার উদ্দ্যেশে ব্যাবহার করা হয়। ফলে না হয় দক্ষতা অর্জন না পায় চাকরী। কারণ কাজ করতে প্রয়োজন হয় দক্ষতার । দক্ষ জনশক্তির অভাবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসের জন্য আমাদের অন্য দেশের তৈরীকৃত পন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীর বিপথে চলে যাচ্ছে।বয়স,চাহিদা ও মেধা বিবেচনা না করে চাপিয়ে দেবার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিখন শেখানোর গোটা প্রক্রিয়ার উপর বিতশ্রদ্ধ। কারণ সেখানে আনন্দ নেই । পড়া মানে মুখস্ত, শিক্ষা মানে পরীক্ষায় পাশ। এখানে প্রতিভার মূল্যায়ন হয় নম্বরে। ভালো নম্বর পেলে মেয়ে বা ছেলেটি ভালো হয়ে যায় । আর খারাপ নম্বর পেলে তার কপালে রাজ তিলকের ন্যায় বসে যায় অপদার্থের মোহর। কিন্তু সে প্রচণ্ড ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারে বা সে দৌড়ে চ্যাম্পিয়ান অথবা তার অতুলনীয় গানের কণ্ঠ এ সবই নম্বরের কাছে হেরে যায়। রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের মাঝে কে শ্রেষ্ঠ – এ বিষয়ে আলোচনা যেমন বাতুলতা তেমনি মেধার চেয়ে মানি বা অর্থের মূল্যায়ণও তেমনি বোকামো। নেই বোকামির অন্তহীন প্রচেষ্টার মাঝে আমরা কেবল ডুবছি ,ডুবে চলছি। একদিকে আমরা শিক্ষাকে ব্যবহার করছি অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারহিসেবে অপরদিকে সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরী বা অর্ভ উপার্জনের পথ সুগোম না হলে আবার আমরা অর্থের দারস্ত হচ্ছি। অবশ্য এর পিছনে পুঁজিবাদী সভ্যতার অনেক অঙ্ক কষাকষি রয়েছে ,সে আলোচনা অবান্তর। শিক্ষার নানা সংজ্ঞা আলোচনা করে আমরা যা বুজেছি তার আরেকটি হলো শিক্ষার প্রধান কাজ মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ সাধন করে তাকে মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু আজ নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা আমাদের একটি সিলেবাস অন্তর্ভূক্ত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখানেও আমরা পড়ি,পড়াই ও পরীক্ষা দেই। আমি কতটা সত্যবাদী , সাহসী বা পরোপকরী তা পরীক্ষায় খাতায় লিখলেই পাশ ;সুতরাং কী দরকার রাস্তায় ঘুরে অন্নহীনকে অন্ন দেওয়া বা বস্ত্রহীনকে আপন কাপড় খুলে জড়িয়ে দেওয়া। এগুলো তো ওর কাজ বা তার কাজ-আমার না। এভাবে ভেবেই আমরা তৃপ্ত হই। মাঝে মাঝে খাঁটি সরিষার তেণ নাকে লাগিয়েও ঘুমিয়ে পড়ি। সে ঘুম এতা নিখাঁদ হয় যে, প্রয়োজনের শত ডাকেও সে ঘুমের কিঞ্চিৎ ব্যত্যয় ঘটে না। আসলে সমস্যা এতো আছে যে,তা লিখতে বসলে বেদনার মহাকাব্য হয়ে যাবে। মজার বিষয়টা হলো এই হাজারও সমস্যার সমধান মাত্র একটি। তা হলো শিক্ষার মূল উদ্দ্যেশের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। আর যিনি শিক্ষাদানের মহানব্রত পালন করেন তাকে তার যোগ্যস্থানটি ফিরিয়ে দেওয়া। সে স্থান গুরুর ,সে স্থান সম্মানের। এছাড়া আরো কয়েকটি কাজ রয়েছে যা করলে অতিদ্রুত বাংলাদেশ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা যায়: 
১. জাতির সবচেয়ে মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিতে সর্ব প্রকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। যেমন: বুয়েটের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি এসে প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের সাথে তার স্বপ্ন প্রজেক্টের কাজ করবে। ক্লাসরুমটিকেই বানিয়ে ফেলবে নাসার গবেষণাগার। সেজন্য কর্তপক্ষকে সকল প্রকার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই ছোট্ট শিশুরা যদি স্বপ্ন দেখতে না শেখে তবে জাতি কখনও শিকল ভেঙে বেরোতে পারবে না।
২. শিক্ষার্থীর মেধা,রুচি ও যোগ্যতা অনুসারে তার শিক্ষার ধরণ নির্বাচন ও দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ যে শিক্ষার্থী ক্যামিস্ট্রিতে খুব ভালো কিন্তু সাহিত্য বুঝতে অক্ষম তাকে সে বিষয়ে জোর না দেওয়। আবার যে গানে দক্ষ তাকে ক্যালকুলাস দ্বারা বিচার করা না হোক।
৩. মুখস্থবিদ্যার স্থানে কাজ করে শিক্ষা লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করা। যেমন: আখলাক বা সচ্চরিত্র। এটির সংজ্ঞা মুখস্থ না করিয়ে বরং সেই ধরণের জীবন যাপনে অভ্যস্ত করিয়েই নম্বর প্রদান করা। 
৪. রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই দেওয়া।যেমন: রাজনীতিবিদ বা নেতা হতে হলে যে স্বপ্নময় যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় তার শিক্ষা শৈশব থেকেই দেওয়া। সে শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত থাকবে সততা,সাহসিকতা,পরোপকারিতা, সহমর্মিতা,সহযোগিতা,নৈতিকতা ,সহনশীলতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ।
৫. নিজ নিজ ধর্মানুসারে নৈতিক শিক্ষাকে কঠোরভাবে  মান্য করা। যেমন: ইসলামের মূল কথা যে শান্তি, তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আবার বৌদ্ধধর্ম আমাদের র্সবংসহা হওয়ার শিক্ষা দেয় । সে শিক্ষাকে জীবন দিয়ে হলেও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্য দিকে হিন্দু ধর্ম আমাদের সর্বজীবে প্রেম বা দয়া করতে শেখায়। সেই শিক্ষাকে হৃদয়-মন সঁপে দিয়ে মেনে চলতে হবে। এভাবে প্রতিটি ধর্মের বিধি ও বিধানকে বিনম্র  শ্রদ্ধা দিয়ে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
৬. নিজের শক্তির উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। অর্থাৎ নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়ে কখনোবা তাকে সংস্কার করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে সংস্কৃতি হলো আমাদের জীবনযাপনের রীতিনীতি। যা আমরা তাই আমাদের সংস্কৃতি । তাই আমাদের ওঠা-বসা,চলা-ফেরা,খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টা সবই সংস্কৃতির অর্ন্তভূক্ত। নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে প্রতিটি বিষয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। যেমন: জাপান। তারা তাদের প্রতিটি কাজকে শিল্পের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। তাদের বাথরুম পরিস্কারের ভিডিও টি পর্যন্ত মানুষ নিবিঢ়ভাবে র্পবেক্ষণ করে। আর  ফুটবল বিশ্বকাপে হেরেও যখন তারা কাঁদতে কাঁদতে গ্যালারি পরিষ্কার করতে থাকে তখন আমরা অনুধাবন করি ওদের সাংস্কৃতিক দৃঢ়তা কতটা শক্ত।
৭. গবেষণা , গবেষক ও গবেষণাগার তৈরী করা। বিশ্বমানের সকল সুযোগ সম্পন্ন প্রযুক্তিগত দিক থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত গবেষণাগার তৈরী করা খুব প্রয়োজন । প্রতিটি বিদ্যালয় হয়ে উঠবে এক একটি গবেষণাগার। যেখানে শিক্ষার্থী নিজ নিজ এলাকার উদ্ভূত যেকোন পরিস্থিতি ও সমস্যার সমাধানে নিরলস কাজ করবে। শিখবে তারা করতে করতে; মুখস্ত করে নয়।
৮. শিক্ষক হবেন শ্রেষ্ঠ মনুষ্যত্মের অধিকারীগণ। শিক্ষকের মেধাবী, সৃজনশীল, সহমর্মী, সহযোগিতা মনোভাব সম্পন্ন ও স্বপ্নীল মনোভাবের হওয়া জরুরী । আর একটি বিষয় হলো ইতিবাচক মনোভবের হতে হবে। এবং শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও অর্থমর্যাদা এতোটাই আকষর্ণীয় করতে হবে যেন প্রতিটি অভিভাবক তাদের সন্তানকে বড় হয়ে শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দ্যাখেন আর  প্রতিটি শিক্ষার্থী শিক্ষকতা পেশাকে ঘৃণা না করে ভালোবাসতে শেখে।

উপসংহার: সহজ করে বললে বলা যায়, শিক্ষা আমাদের অন্তর ও বাহিরকে পরিচর্যা করে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে সুন্দর,সুখী ও স্বাচ্ছন্দময় করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের পশুপ্রবৃত্তিকে দমন করে তাকে মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। শিক্ষা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।   শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলির যেমন: ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ, অধ্যবসায় ইত্যাদি বিকাশ ঘটায়। জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে নিজের শক্তির প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে । দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদের মাঝে অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলে। বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে। গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্ত্তনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীদেরকে মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী করে গড়ে তোলে। সেই সাথে বিশ্বমানের দক্ষতা সৃষ্টি করে উচ্চমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবার জন্য।

আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ