গল্প // লাশের অধিকার : মরিয়ম মেরিনা।।



আজ অ্যালকোহল একটু বেশি গিলে ফেলেছে বাশার।চোখ মাথা ঝিমঝিম করছে।একটা দারুণ ঘোরে আছে সে।তার কাজের জন্য এই ঘোর অবশ্য খুব দরকার।যত বেশি ঘোরে থাকবে তত বেশি সে কাজে মনোযোগী হবে।


জেল প্রাচীরের পাশ ঘেঁসে টলতে টলতে সে যখন মর্গের খুব কাছে আসলো জঙ্গল থেকে হুট করে একটা কালো বিড়াল তার পায়ের কাছে দু'বার পাক খেয়ে বেওয়ারিশ লাশের কবরগুলোর আড়াল হল।

যেখানে জেলখানার শেষ প্রাচীর,তার পাশেই মর্গ।পিচঢালা রাস্তা থেকে কয়েক কদম যেতে হয়।এরপাশেই বেওয়ারিশ লাশগুলোর করব তারপরেই স্থানীয় কবরস্থান।সেখানে শুনশান নীরবতা, বড় বড় গাছের ছায়া আর ধূ ধূ ফসল ক্ষেত।রাস্তার অপর প্রান্তে প্রসাশনিক এলাকার পরিত্যক্ত বিল্ডিং যা ঢাকা পরেছে বিশাল বিশাল কয়েকটি গাছে।কোন সরগম নেই।দিনেই একা এপথে কাউকে পাওয়া যায় না।মাঝেমধ্যে এখান থেকেই ভেসে আসে বিলাপ কান্না কিংবা খিলখিল হাসির অসহ্য শব্দ। 


শুধু বাশার নয়,পুবমুখী এই লাশকাটা ঘরে ছয় হাত টেবিলের উপর শব কাঁটে আরো অনেকে।

বাশার মুসলিম। লাশ কাটে মূলত ডোমেরা।কিন্তু ভাগ্যের লিখন।তার এ কাজটিকে সহজ মনে হয়। এদিক থেকে তাকে হিংস্র বলা যায়।

কাজটা তার নেশায় দাঁড়িয়েছে। শব দেখলেই যতক্ষণ না কেটেকুটে সর্বস্থ নেয় ততক্ষণ সে উন্মাদের মত আচরণ করে।এই কাটাকুটেই তার নেশা।এই নেশাকে আরো চরমপন্থী করে অ্যালকোহল।


পিয়াসদা আগেই এসেছে।বারান্দার সিঁড়িতে বসে সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজেকেই আড়াল করতে চায় সে।আমতলায় পাশে দু'জন দাঁড়িয়ে।বোঝাই যাচ্ছে,লাশের আপনজন।


পিয়াসদা এই লাইনে আছে ১৩ বছর।বাশার আছে ৬ বছর।পিয়াস দার ঘর সংসার থাকলেও বাশার প্রথম ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে বাউন্ডুলে।শেফালী তারে খুব ভালোবাসত।কিন্তু তার শয়তান বাপ মকবুল মিয়ার সাথে তার জোর করে বিয়ে দেয়।কে জানে...শেফালী এখন কেমন আছে।তার প্রথম প্রেম,প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে যায় মকবুল মিয়ার টাকার কাছে।


বারান্দার সিঁড়িতে ধপ করে বসে পিয়াসের হাতের সিগারেটে ভাগ বসায় বাশার।


পশ্চিমের দোলা থেকে আসছে শীতল বাতাস।ঘরের মাঝে বরাবর ছ'হাতে টেবিলে শোয়া একটা লাশ।লাশের মুখের দিকে পিয়াস আর উল্টো দিকে বাশার।

দেহ কাঁটার মাঝ সময়ে চোখ আটকে যায় বাশারের।কী মায়া মুখে।অতলে ঘুমে যেন সে।আহা!!কী সুন্দর চোখের পাপড়ি, ফিনফিনে নাক,জোড় ভ্রু।

এমন সুন্দরী কেন যে নিজে মৃত্যুর কাছে ধরা,দেয় কে জানে?


লাশ হস্তান্তর করে পিয়াসদা আর বাশার যখন স্থানীয় কবরস্থান পার হয়ে টিটিসি'র মোড়ে একজন উম্মাদ প্রেমিকের দেখা মিলল।

আচ্ছা প্রেমিকার লাশে প্রেমিকের কোন অধিকার থাকে না কেন?



আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ