রফিকুল আলম



বিদেশের বিশ্ববিদ‍্যালয়েও ছাত্র রাজনীতি আছে। কিন্তু তাদের ছাত্র রাজনীতি কেমন জানেন? —তাদের ছাত্র ইউনিয়ন আছে। প্রতিনিধি আছে। ছাত্র প্রতিনিধিরা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। আওয়াজ তুলে। ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণার মান বাড়ানোর জন‍্য কাজ করে। ছাত্রদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন‍্য কাজ করে। স্টুডেন্টরা যেনো পাশ করেই কর্মজীবনে ঢুকতে পারে সেসব নিয়ে কাজ করে। জব ফেয়ারের আয়োজন করে। ছাত্র প্রতিনিধিরা বছরের পর বছর ছাত্র থাকে না। চার বছরের কোর্স চার বছরেই শেষ করে বিদায় নেয়। নির্বাচনের পদ নিয়ে মারামারি করে না। ওরা কারো চামচামি করে না। নেতার ছবি পূজা করে না। হল দখল করে না। ক‍্যাম্পাস দখল করে না। সকাল-বিকাল দলাদলি নিয়ে থাকে না। —এই হলো ওদের ছাত্র রাজনীতির সংক্ষিপ্ত রূপ। 


বিদেশের কোন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে নেতার ছবি পাবেন না। দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার পাবেন না। মিছিল মিটিং করে রাস্তা বন্ধ করতে দেখবেন না। মারামারি করে ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে রাখবে না। ক‍্যাম্পাসে নেতার পেছনে স্লোগান দিবে না। স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম—একটা পোস্টার তো দূরের কথা, একটা লিফলেটও দেখি নাই। অনলাইনে ভোট দিয়েছি। পরে সেই ইউনিয়ন ওদের এক মন্ত্রীকে ডেকে এনে একটা মিটিং করেছিলো। আন্ডারগ্রেজুয়েটের স্টুডেন্টরা যেভাবে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছে—সে দৃশ‍্য আমি কোনদিনও ভুলবো না। মন্ত্রীর চেহারা লাল হয়ে গেছে। মন্ত্রীর সাথে কোন চেলা-চামচা ছিলো না। মন্ত্রী কোন স্টুডেন্টকে বলে নাই—চুপ করো! —এই হলো ওদের ছাত্র রাজনীতি। নেতারা ভয়ে ওদের ইউনিয়নের সাথে মিটিং করতে চায় না। 


আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটিতে যে রাজনীতি, সেটা হলো মুক্ত চিন্তাকে ধ্বংস করার রাজনীতি। তরুণরা যেনো কথা বলতে না পারে, ভাবতে না পারে, চিন্তা-চেতনায় জাগ্রত হতে না পারে, সেই রাজনীতি। ক‍্যাম্পাস টহল দাও, যেনো অন‍্যরা কথা বলতে না পারে। হল দখল করো—হলগুলো যেনো তাদের বাবার সম্পদ! 

—এগুলোকে রাজনীতি বলে, নাকি গুণ্ডামি বলে? 

ক‍্যাম্পাসে নিজের দলের নেতা-নেত্রীর পূজা করো। পোস্টারে ছেয়ে দাও। নেতার গুণগাণ করো। নিজের দলের নেতারা যদি নিকৃষ্টতম কাজও করে, তাহলে সেটার পক্ষে সাফাই গাও। —এটাকে রাজনীতি বলে, নাকি নোংরামি বলে? বিশ্ববিদ‍্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হলে—সরকার দলীয় ছাত্র নেতারা কোন কথা বলে না। বিশ্ববিদ‍্যালয়ে গবেষণা নেই—সেগুলো নিয়ে কথা বলে না। বিশ্ববিদ‍্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সেশন জটে ভুগছে—সেগুলো নিয়ে কথা বলে না। —তাহলে কিসের ছাত্র রাজনীতি এটা? 


ছাত্ররা রাজনীতি করবে কিন্তু চামচামি না। ছাত্ররা লিডারশিপ শিখবে কিন্তু ধ্বংসাত্মক কাজ না। ছাত্ররা সমাজ গড়বে কিন্তু শিক্ষাকে দূরে রেখে না। ছাত্ররা নেতৃত্ব শিখবে কিন্তু বিশ্ববিদ‍্যালয় বন্ধ করে না। ছাত্ররা নেতা হবে কিন্তু নেতার সুরে কথা বলে নয়। যে দেশে গুণ্ডামি-পাণ্ডামিকে ছাত্র রাজনীতির নাম দিয়ে যুগের পর যুগ টিকিয়ে রাখা হয়, সে দেশে পঞ্চাশ বছরে কেন, একশো বছরেও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব তালিকায় আসবে না। 


আমাদের বিশ্ববিদ‍্যালয় ও শিক্ষাঙ্গণে যে দলীয় ছাত্র রাজনীতি, সেগুলো হলো দলের স্বার্থে। দুনিয়ার কোন দেশ তার তরুণদের দিয়ে শিক্ষাঙ্গণে এমন বিধ্বংসী সংস্কৃতি গড়ে তোলেনি। ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাকে ধ্বংস করেনি। এমন কি আফ্রিকার ক্ষুধাপীড়িত কোন দেশও না।

আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ