শিল্প ও সত্য / মো. আরাফাত হোসেন রাফি




শিল্প সম্পর্কিত একটি প্রচলিত প্রশ্ন হলো, শিল্প কি দর্পণ যেখানে জীবনের প্রতিফলন দেখা যায়? কিছু অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি মাঝেমধ্যে নানা বিতর্ক উসকে দিলেও এর উত্তর মোটামুটি হ্যাঁ সূচক। আমরা জীবনে যে ধরনের আবেগ, ভাবনা, নীতি-নৈতিকতার দ্বন্দ্ব, সুখ-দুঃখ ইত্যাদির অভিজ্ঞতা লাভ করি শিল্পের সেই একই ধরনের অনুভূতি জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে। যে মানুষের শিল্প সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা আছে তিনিই এ বিষয়ে একমত হবেন। 

নব্যধ্রুপদী তত্ত্ব অনুযায়ী শিল্প অনুকৃতি, সৌন্দর্য ও নৈতিক গুরুত্ব—এই তিনভাবে সত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

আবার বিশ্লেষণধর্মী অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব অনুযায়ী সত্যের সঙ্গে শিল্পের প্রয়োজনীয় কোনো সম্পর্ক নেই। শিল্পের রম্যবাদী তত্ত্ব বলছে যে শিল্প অধিবিদ্যক সত্য প্রকাশ করে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, "শিল্পী বাহ্যিক আদলের অনুকারী হওয়ায় সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে।" তাঁর মতে, "যে জীবনের অবস্থান সত্য থেকে অনেক দূরে শুধু সেই জীবনের বিপজ্জনক ও অগভীর অনুকৃতিই হলো দুঃখ-কষ্ট জাগিয়ে তোলা নয় বরং আমাদের জন্য একটি ধর্মীয় বার্তা ছেড়ে যাওয়া।

এই দৃষ্টিভঙ্গি শিল্পে বস্তুর সঠিক উপস্থাপনাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরেনি। শিল্পী যা প্রত্যক্ষ করেন তার হুবহু অনুকৃতি নির্মাণ করেন না, বরং বাস্তবতার গভীরের এক অনুভূতি তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। শিল্পী দৃশ্যগ্রাহ্য বস্তুর মাধ্যমে তার ‘স্বপ্ন’ তুলে ধরেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাহ্যিকভাবে কোনো বস্তু কী দেখায় আর কী প্রকাশ করে তার একটি পার্থক্য নির্দেশ করে।

যে শিল্পকর্মটি কোনো স্বপ্ন প্রকাশ করছে বলে কারো কাছে মনে হচ্ছে, অন্যের কাছে তা-ই প্রাণহীন ও নির্জীব। কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পৌনঃপুনিকতা শিল্পীকে মুদ্রাদোষাক্রান্ত করার পাশাপাশি তাঁর কাজের গুরুত্ব কমিয়ে দেয় এবং তাঁর স্বপ্নও তখন পুরনো হয়ে যায়। একটি শিল্পকর্ম কোনো কিছু প্রকাশ করার আগে থেকেই নির্মিত হয়, কিন্তু তা যদি সত্য বর্জিত হয় তাহলে তা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মত দিই। শিল্পীর স্বপ্ন ত্রুটিপূর্ণ বলে তাঁকে খারিজ করে দেওয়ার চেষ্টা করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, নিটার, প্রযুক্তি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ