নন্দনতত্ত্ব ও অন্যান্য কবিতা | আদিবা নুসরাত


নন্দনতত্ত্ব


ক্ষত চিহ্নে কোন মাছির ভনভনানি নেই, সেইখানে চাষ হয় নীলপদ্ম। জানালার ওইপাশে অন্ধকার যেন পরকাল এসে থেমে গ্যাছে। রিক্সার টুংটাং আওয়াজ ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে,আর কোন শব্দ নেই। আকাশ আলো করে আছে বহুযুগ আগের নক্ষত্রেরা ওদের শরীরে শ্যাওলার ঘ্রাণ। গল্পের নায়ক নায়িকারা তখনো ঘুমে যেন দীর্ঘকাল জেগে ছিল। ঘুম ভাঙানো পাপ তাই আমি আর গল্প লিখিনি সেইরাতে।সেই আশ্চর্য রাতে অসংখ্য হাস্নাহেনা ফুটেছিল। হাস্নাহেনার স্মৃতিতে এখনো সাপের পিচ্ছিল শরীর, এখনো মৃত্যুর ঝাঁঝাল  গন্ধ,এখনো অজানা বিষাদ, ঘোরলাগা জ্বর। গল্পেরা ধীরেধীরে মিলিয়ে যাচ্ছিল-ছোট ছোট পদক্ষেপে। জানালার পাশে শেষ আলোটুকুও অবশিষ্ট নেই,মেয়েটি ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে যেন দেহ ছিঁড়ে প্রাণ ওড়ে গেল এক্ষুনি। আমি সান্তনা দিতে গিয়ে ফিরে এসেছি সান্তনা তাঁকে মানায় না...


চিঠি


এই জীবনে যতটা ফাঁকি দেবার
তার অর্ধেকটা দিয়েছিলে স্কুলের সেই 
অংক স্যারকে আর অর্ধেকটা আমাকে।
অংক স্যারের তোমার ফাঁকিতে কিছুই
যায় আসে নি।সে তার পরিবার নিয়ে
সুখেই আছে...তোমার ফাঁকিতে আমার বোধহয় 
যায় এসেছিল। বহুকাল  আমার 
ঘর, বাড়ি,উঠান ভরে ছিল নোনাগন্ধে... 
সেসব ভাবার সময় তোমার ছিলনা বলে
তোমার নেভি ব্লু শার্ট এখনো অক্ষতই আছে।
অথচ তুমি চেয়েছিলে,
কোন একদিন
কোন একরাতে
আমরা একত্রে উল্কা পতন দেখবো।
সেই নির্দিষ্ট উল্কার ফসিলের খোঁজ
আমি এখনো রাখি।
তোমার সেই বত্রিশ পৃষ্ঠার চিঠি
এখনো আমার হাত ব্যাগে ঝুলে থাকে।
তুমি একদিন জানতে চেয়েছিলে না,
নিজের মধ্য আমি কেন অসংখ্য গোলকধাঁধা পুষে রাখি?
শোনো, অপেক্ষার উত্তেজনা ফুরিয়ে
গেলে অপেক্ষা ভরে যায় দীর্ঘশ্বাসে।
প্রিয়তমেষু,
প্রত্যাখানের চিঠি আমি লিখছি না।আমি শুধু বলতে এসেছিলাম, আমি অংক স্যারের থেকেও সাহসী এবং বিনয়ী। নই কি? আমার নীল চুড়ি আমাকে ফিরিয়ে দেবেনা?

-এইখানে ইতি ...


অববাহিকা


আমাকে পেরিয়ে গেছো তুমি
ভেসে যাওয়া প্রেমিকের মতো,
দূর থেকে দূর...
হৃদয়ের গহীনতর বেদনা নিয়ে -
সেইসব সনাতন প্রেমে এখন
ধেয়ে উঠেছে কুমারীলতা
সেইসব পরিচিত পায়ের ছাপে
আর কোন রঙ লেগে নেই
সেইসব পরিচিত রোদেলা দুপুর
আমার হারিয়ে যাওয়া স্কুলব্যাগে...

এখন আমাদের কোন কাকমরা
দুপুর নেই, সন্ধ্যার বকুনি নেই,
আধ ছেঁড়া চকলেটের খোসার
খচর মচর নেই। এখন আমাদের
বলতে আছে - তোমার মধ্যরাতের
কান্না, আমার আকাশ নীল শাড়ি।


দেয়াল


সব ব্যস্ততা ফুরায়ে যায়
দিনের, রাতের -
আমরা ছেড়ে আসি
জাফরানি রঙা রোদ

হৃদয়ে জমে ওঠে প্রাচীন দেয়াল
শ্যাওলা জমা।
আমাদের কত কথা!
তবুও ফুরায়ে যায় তুমুল শখের দিন,
পৌষের মেলা
তবুও ফুরায়ে যায়
যা থেকে যাবার কথা অনন্তকাল।

আলো নিভে গেলে
হাহাকার করে ডেকে ওঠে সেই
আহতপাখি, যাকে কেউ মনে
রাখেনি কোনদিন- কোনকালেও।
আরো পড়ুন -->>

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. আশরাফুল ইসলাম৮/৩/২১, ৭:৪৯ PM

    আলো নিভে গেলে
    হাহাকার করে ডেকে ওঠে সেই
    আহতপাখি, যাকে কেউ মনে
    রাখেনি কোনদিন- কোনকালেও।---- সুন্দর কথা। হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

    উত্তরমুছুন
  2. পপি আক্তার১৮/৩/২১, ৯:৫৭ PM

    আপু একটা প্রশ্ন ছিল, যদি উত্তর দেন তাহলে উপকৃত হতাম। আমার প্রশ্ন হল যে 'নন্দনতত্ত্ব' কাকে বলে এবং এর সঙগা কি তা একটু জানাবেন? আমি শব্দটাকে চিনি নাই, তাই জিজ্ঞাসা করলাম, কিছু মনে করলেন না তো?

    উত্তরমুছুন
  3. নন্দনতত্ত্ব,দর্শনের একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য,শিল্প স্বাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়
    এবং এইভাবে ও বলা যায়
    নন্দনতত্ত্ব শিল্প,সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি সুক্ষ্ম ও সমলোচনামুলকভাবে আলোচনা করে।
    পপি আক্তার
    ধন্যবাদ
    মন্তব্য করার জন্য।

    উত্তরমুছুন

অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।