শীতকাল চলছে। গ্রামে যাব, দাদা বাড়ীতে বেড়াতে যাব বলে অস্থির ছোট্ট তানিয়া। এবার কিন্তু গতবারের মত ২-৩দিন থেকে চলে আসতে পারব না, ছুটি বেশী নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি তানিয়ার মায়ের। অবশেষে তানিয়ার বাবা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ১০দিনের সফরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা।
শীতের আমেজে পিঠা পুলির ধুম পড়েছে বাড়িতে। তার উপর আবার বাড়ির ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনি বাড়ীতে এসেছে বলে কথা। ভাপা পিঠা, চিতুই পিঠা, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা সহ হরেক রকমের পিঠা। প্রতিদিন কোন না কোন নতুন পিঠা বানায় দাদি। পাড়ার কয়েকটা চাচ্চু সহ তানিয়ার বাবা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় ব্যাডমিন্টনের আসর জমিয়েছে। প্রতিদিন সকাল বিকেল চলে এ খেলা। সব মিলিয়ে দারুণ হৈ-হুল্লোড় করে কেটে যাচ্ছিল সময়। এর মাঝে মিলি ফুপি একদিন তাকে নিয়ে গ্রামের অন্যপাশে বিলের ধারে যায়। শুকনো মৌসুম। বিলে কোথাও কোথাও পানি জমে থাকলেও মাঝে মাঝে খানিকটা করে যায়গা একদম শুকিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে রংবেরঙের পাখিদের মেলা বসে। তানিয়া আর মিলি দুজনে আকাশ দেখে, পাখিদের সাথে কথা বলে। হঠাৎ তানিয়া খেয়াল করে বিলের অপর পাশে যেখানে মোটামুটি একটু পানি আছে সেখান ধূসর-কালো রঙের অদ্ভুত সুন্দর একদল হাস খেলা করছে, মাছ ধরছে। সে ছুটে সেই হাসগুলোর কাছে গেলে পুরো দলটা উড়াল দেয় আকাশে। ছোট্ট তানিয়া অবাক হয়ে মিলিকে বলে
দেখ ফুপি,
-হাঁসগুলো কেমন পাখির মত উড়ে যাচ্ছে!
মিলিও এই দৃশ্যই দেখছিল এতক্ষণ। সে হাসতে হাসতে তানিয়াকে বলে
- হাস নয়, এগুলো অতিথি পাখি।
- কই আগে তো কখনো দেখিনি।
- এরা তো সবসময় আমাদের দেশে থাকে না। শীতকালে এদের দেশে যখন বরফ জমে যায় তখন উড়ে আমাদের দেশে চলে আসে। আবার যখন গ্রীষ্ম কালে এদের দেশে বরফ গলতে শুরু করে তখন এরা নিজেদের দেশে চলে যায়।
তানিয়া অবাক হয়ে শোনে। তারপর থেকে এই হাসের মত পাখি গুলোকে দেখতে প্রতিদিন বিকেলে তার মিলি ফুপি সহ বিল পারে যাওয়া চাই। উড়ে যাবে এই ভয়ে সে কখনো আর এদের খুব কাছাকাছি যেত না। তবে প্রতিদিন খুব মজা পেত এদের দেখে। এমনি করে তাদের ছুটি শেষ হওয়ার পথে।
শহরে ফিরে আসার আগের দিন বিকেলে মন খারাপ করে তানিয়া মিলি ফুপিকে বলে,
- আবার এলে তো আর এদের সাথে দেখা হবে না। শীতকাল শেষ হলে তো এরাও চলে যাবে।
- মন খারাপ কর না মামণি, আগামীবছর শীতকালে আবার এরা আসবে। আর তুমিও অনেকদিনের জন্য গ্রামে আসবে। আমরা আবারও এদের পানিতে ডোবা, খেলা করা, মাছ ধরা দৃশ্য উপভোগ করব।
তানিয়া অতিথি পাখি বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে চলে আসে। আর তার শৈশব স্মৃতি ভান্ডারে জমা হয় অতিথি পাখির সাথে মিতালির এক চমৎকার সময়।
আরো পড়ুন -->>
6 মন্তব্যসমূহ
মনোজ্ঞ গল্প৷ ভাল লাগল৷
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনসুন্দর!! অতিথি পাখিদের প্রতি এমন প্রেম সত্যিই মুগ্ধ করে দেয়। লেখিকার প্রতি জানাই অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুননির্মল রাজেশ
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনপাঠ মুগ্ধ। দারুন লিখেছেন
উত্তরমুছুনঅনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের দায় মন্তব্যকারীর, সম্পাদকের নয়।